পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুখখানি আমি দেখি। একবার তাহার দুই-একটি কথা শ্ৰবণ করি। যখন সে নিতান্ত শিশু ছিল, তখন আমার পত্নীর পরলোক হইয়াছিল। মাতার ন্যায় আমি কন্যাটিকে অতিযত্নে প্রতিপালন করিয়াছিলাম। আমি তাহাকে কখন কুশিক্ষা প্ৰদান করি নাই। পিতা হইয়া কন্যাকে কেহ কখন কি কুশিক্ষা প্ৰদান করে? জানিয়া শুনিয়া আমি বৈবাহিককে প্রতারণা করি নাই। আমি গিনি সোনার মূল্য দিয়াছিলাম। স্বর্ণকার যদি কোনরূপ বঞ্চনা করিয়া থাকে, তাহা হইলে আমি কি করিব? আমি বৃদ্ধ আমি পীড়িত। ও গো! একবার তোমরা আমার ললিতাকে আনিয়া দাও। মৃত্যুশয্যায় শায়িত দীন ক্ষীণ ব্ৰাহ্মণের কাতরোক্তি শুনিয়া সকলের হৃদয় বিদীর্ণ হইয়া যাইতে লাগিল। পুণ্ডৱীকের নিকট বার বার তাঁহারা লোক পাঠাইলেন। অবশেষে সেই সমৃদ্ধিশালী জ্ঞাতি নিজে পৰ্যন্ত গমন করিলেন । পুণ্ডৱীক কিছুতেই বৃদ্ধের কন্যাকে পাঠাইলেন না। শেষ অবস্থায় বৃদ্ধ জ্ঞানশূন্য হইলেন। বিকারের প্রলাপে ললিতার জন্য তিনি অবিরত বিলাপ ব্লতে লাগিলেন। — 'ললিতা আসিয়াছ! এস মা! এস। এত দিন তুমি আস নাই কেন মা? তুমি তো জান মা! যে, তোমাকে একদণ্ড না দেখিয়া আমি থাকিতে পারি না। তুমি তো জান মা! যে সন্ধ্যাবেলা দোকান হইতে আসিয়া আগে তোমাকে কোলে করিতাম। পায়ের নিকট বসিালে কেন মা? আমার এই হাতের নিকট ঠিক সম্মুখে এস। চক্ষুতে আর আমি ভাল দেখিতে পাই না। সব যেন অন্ধকার দেখিতেছি। সেইজন্য কাছে আসিতে বলিতেছি। তোমার মুখ আজ এত মলিন কেন মা? তোমার কাপড়খানি এত ময়লা কেন? তুমি বড় রোগ হইয়া গিয়াছ!” এই কথা বলিতে বলিতে বৃদ্ধ একবার চমকিয়া । তাহার পর তিনি বলিলেন,- 'না, কই ললিতা তো আসে নাই! তাহার শ্বশুর-খাগুড়ী তাহাকে তো পাঠান নাই। হয়, হায়! পৃথিবীতে এমন নিষ্ঠুর লোকও থাকে। তা! শেষকালে তোমাকে একবার দেখিতে পাইলাম না!:--” বিনয় বুলিলেন,— “এইরূপ বিলু করিতে বৃদ্ধের প্রাণত্যাগ হইল। সেই জ্ঞাতির নিকট আমি এই সকল কথা শুনিয় । এখন দেখ, সুবালা! চড়ুই পাখীর পায়ে সূতা বঁাধিয়া খেলা করা একরূপ নিষ্ঠুরতা, আর এ একরূপ নিষ্ঠুরতা। বালকের শাক-শাবক বলপূৰ্ব্বক কাড়িয়া লওয়া, বৃদ্ধ ব্ৰাহ্মণকে কারাবাসে প্রেরণ করা, শেষকালে তাহার কন্যাকে একবার দেখিতে না দেওয়া, –এরূপ বিবরণ শ্রবণ করিলে সৰ্ব্বশরীর শিহরিয়া উঠে । তুমি বোধ হয় জান, সুবালা! যে, দানা দৈত্য ভূত প্ৰেত পিশাচগণ কখন কখন মানুষের দেহ ধারণ করিয়া পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে! তাহারাই এইরূপ কাৰ্য্য করিতে পারে। যাহারা প্রকৃত মানুষ, তাহারা এরূপ কাৰ্য্য করিতে পারে না । চুপ কর সুবালা! আর কাদিও না। একদিকে যেরূপ পুণ্ডরীকের ন্যায় পাপিষ্ঠদিগের নিষ্ঠুতায় ধরণী তাপিত হইয়া পড়েন, সেইরূপ অপর দিকে পরদুঃখ-শ্রবণজনিত তোমার মত লোকের চক্ষুজলস্বরূপ পুণ্যসলিলে সিক্ত ও সুশীতল হইয়া তিনি শান্তিলাভ করেন। আমার বয়স অধিক হয় নাই সত্য; কিন্তু পিতা আমাকে অনেক উপদেশ দিয়াছেন। একবার পুণ্ডৱীক সম্বন্ধে কি কথা হইতেছিল। পুণ্ডৱীককে লক্ষ্য করিয়া পিতা আমাকে বলিলেন, “দেখ, বিনয়! পুণ্ডরীকের মত লোক কখনও সুখী হয় না। তাহার মন যদি উদঘাটিত করিয়া নিরীক্ষণ কর, তাহা হইলে বুঝিবে যে, তাহার অন্তঃকরণ অশান্তিতে জৰ্জ্জৱীভূত হইয়া আছে। যতই ধন হউক না। কেন, ধনের লালসা কখনই পরিতৃপ্ত হয় না। পুণ্ডৱীক ধনবানু হইয়াছে সত্য, কিন্তু ধনলালসা পাপের পরিণাম। sNAls viði (SS BS! ro www.amarboi.com ro Av5S