পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাহাদিগকে একবার দেখা নাই কেন? তাহার উপর এই যে, আমি তাঁহাদের কোন উপকার করিতে পারিতাম না। তাহার উপর আমাকে তাহারা বিষ-নয়নে দেখিতেন। আমি আসিলে তাহারা সন্তুষ্ট হইতেন না, বরং অসতুষ্ট হইতেন। কিন্তু আমি তাঁহাদের সংবাদ লইতাম। সেই সূত্রে তোমার কথাও আমি কিছু কিছু শুনিয়াছিলাম। বড়বীে তোমার দিদিমণি বৃদ্ধা হইয়াছিলেন?” সুবালা উত্তর করিলেন,- “র্তাহার চুল পাকিয়াছিল। তবে খুব যে তিনি বৃদ্ধ হইয়াছিলেন, তাহা বোধ হয় না। তাঁহার একখানি ছবি আছে—দেখিবেন?” বিজয়বাবু বলিলেন,- “কোথায় আছে? চল যাই, দেখি!” পূৰ্ব্বদিকের ঘরে যে স্থানে ছবি আছে, সেই দিকে দুইজনে বারাণ্ডা দিয়া গমন করিতে লাগিলেন। বিজয়বাবুর আগমনসংবাদ বিনয় পাইয়াছিলেন। সম্পত্তি সম্বন্ধে তিনি কি করেন, তাহা জানিবার নিমিত্ত বিনয় অতিশয় উৎসুক হইয়াছিলেন। তিনি ভাবিলেন,- “পূৰ্ব্বদিকের সিঁড়ি দিয়া গোপনে উপরে বসিয়া থাকি। কোন লোকের দ্বারা সুবালার নিকট সংবাদ পাঠাইব । সুবালা আসিলে তাঁহার প্রমুখাৎ সকল কথা অবগত হইব। খাদা ভূত এখন কি করিতেছে, তাহাও গিয়া দেখিব।” এইরূপ স্থির করিয়া বড়ালমহাশয়ের নিকট হইতে অন্ধকার ঘরের চাবি লইয়া তিনি চুপি-চুপি পূৰ্ব্বদিকের সিঁড়ি দিয়া উপরে উঠিলেন ও যে গৃহে রায়-গৃহিণীর মৃত্যু হইয়াছিল, সেই ঘরের খাটে গিয়া বসিলেন। সেদিকে চাকর-চাকরাণী কেহ আসিলে, তাহা দ্বারা সুবালাকে সংবাদ দিবেন, সেই প্ৰতীক্ষা করিয়া ৰু । কিন্তু অল্পক্ষিণ পরেই বিজয়বাবু ও সুবালার কণ্ঠস্বর তিনি শুনিতে পাইলেন। য়া তাহারা সেই ঘরের দিকে আসিতেছিলেন। মাঝের দ্বারের তালা খুলিয়া বিনয় অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করিলেন । মাদুরের উপর খাদা ভূত শুইয়াছিল। বিনয় — “সুবালা ও আর একজন ভদ্রলোক পাশের ঘরে আসিতেছেন । নিঃশব্দে , কথা কহিও না।” বিনয় ও খাদা ভুত চুপ করিয়া সেই ঘরে বসিয়া রহিলেন। বিজয়বাবু ও সুবালা পার্শ্বের ঘরে "আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ইহার দক্ষিণ গায়ে চােরকুঠরী বা অন্ধকার ঘর,-যে স্থানে খাদা ভূতের সহিত বিনয় বসিয়া আছেন। ইহার উত্তর গায়ে আর একটি শয়নাগার,-যে স্থানে পূর্বে রাজাবাবু শয়ন করিতেন ও যে স্থানে পরে সুবালার মাতা বাস করিতেন। রায়মহাশয় ও রায়-গৃহিণীর সম্বন্ধে নানা কথা হইতে লাগিল। বিজয়বাবু বলিলেন,- “আমি শুনিলাম যে, তোমার এখনও বিবাহ হয় নাই। সুবালা! সেই অবধি আমার মনে বড় আক্ষেপ হইতেছে। আমার এক পুত্ৰ আছে, একমাত্র পুত্র। অনেক দিন হইতে আমার গৃহিণী তাহার বিবাহের সম্বন্ধ স্থির করিয়া রাখিয়াছেন। আমি কথা দিয়াছি। সে কথার কিছুতেই আর অন্যথা হইতে পারে না । আহা সুবালা! দুই বৎসর আগে যদি তোমায় দেখিতাম। কন্যা বলিয়া তোমাকে কোলে লইতে আমার বড়ই সাধ হইতেছে। প্ৰাণ ভরিয়া তোমাকে মা-জননী বলিয়া ডাকিয়া ঘরে লাইতে বড়ই আমার বাসনা হইতেছে; কিন্তু মা কি করিব? কোন উপায় নাই!” সুবালা মস্তক অবনত করিয়া রহিলেন। কোন উত্তর করিলেন না। কিছুক্ষণ পরে তিনি বলিলেন, — “বড়ালমহাশয়কে বলিয়া আসি না কেন? কাগজপত্ৰ প্ৰস্তুত করিতে বিলম্ব হইবে।” বিজয়বাবু বলিলেন, — “পাগলি! আমি এ বিষয় লইব না। এ বিষয় তোমারই থাকিবে।”

      • firls six g3, 3e) - www.amarboicom a Գ8ֆ