পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপস্থিত রহিলেন কেবল বিজয়বাবু, সুবালা, পিসীমা, বড়ালমহাশয় ও তাঁহার গৃহিণী। সোনা-বীে পুনরায় আপনা-আপনি প্ৰলাপ বকিতে লাগিলেন,- “হায়। আমি একদিন রাজরাণী ছিলাম। কিন্তু আজ আমি কি! হায়, হায়! আজি আমি কি! রাজাবাবু। রাজাবাবু! ওরূপ রুক্ষভাবে আমার উপর কটাক্ষপাত করিও না ।” দর-দর ধারায় সোনা-বীেয়ের দুই চক্ষু দিয়া বাষ্পবারি বিগলিত হইতে লাগিল । চক্ষু মুছিয়া, –“কি বলিলে? রাজাবাবু! তুমি কি বলিলে? আমাকে তুমি ঘরের ভিতর ডাকিতেছ? আমি দাসী, আমাকে তুমি যা বলিবে, তাই করিব। আহা রাজাবাবু! যদি তোমার মুখ হইতে সেকালের মত একটি কথাও শুনিতে পাই, তাহা হইলে আমার জীবন সার্থক হয়। আমার বুকের ভিতর রাত্ৰি-দিন যে দাবানল জুলিতেছে, সে জ্বালা অনেকটা শীতল হয়।” ঘরের ভিতর প্রবেশ করিয়া,- “রাজাবাবু! এই ঘরে আমরা দুইজনে কত হাসি৷ হাসিয়াছিলাম, কত আহাদ-আমোদে কালাতিপাত করিয়াছিলাম। পা ঝুলাইয়া গায়ে-গায়ে দুইজনে খাটের উপর বসিতাম। তুমি বলিতে যে, “সৌন্দৰ্য্য বৃদ্ধি করিবার নিমিত্ত লোকে গহনা ও বস্ত্ৰাদি পরিয়া বেশভূষা করে, কিন্তু তোমার গায়ের বর্ণের নিকট সুবৰ্ণও বিবৰ্ণ হইয়া যায়।’ সেজন্য আদরে তুমি আমাকে সোনা-বীে বলিয়া ডাকিতে। আমার চুলের কোশা হাতে করিয়া তুমি বলিতে যে,-“লোকে আসিয়া আসিয়া দেখুক, আমার সোনা-বীেয়ের কেশগুচ্ছ কৃষ্ণবর্ণেরঞ্জিত বহুমূল্য রেশম অপেক্ষা অনেকগুণে উজ্জ্বল ও কোমল কি না!” নিবিড় হরিৎবর্ণের বনমধ্য দিয়া প্রবাহিত সূক্ষ্ম রাজতরেখা-সদৃশ বর্ষাকালের গিরিনিৰ্ব্বত্ত্বের সহিত তুমি আমার সীথির তুলনা করিতে। তুমি বলিতে,-“সূৰ্য্যালোকে আলোকিত কৃষ্ণহীরক-নিৰ্ম্মিত দুইটি তারা যদি সম্ভব হয়, তাহা হইলে কেবল তাহার তোমার নয়নযুগলের তুলনা হইতে পারে। ঈষৎ রক্তিমআভায় রঞ্জিত তোমার গণ্ডদেশ কবিগণ কখনও দেখিতেন, তাহা হইলে না। কবি বলিয়াছেন যে, তাহার সুন্দরীর আমার সোনা-বীেয়ের ওষ্ঠীদ্বয় ལ་ཀ་མ་ལ་ཤས་ সাগরগর্ভে গিয়া লুক্কায়িত হইয়াছে। মুক্তার লজ্জা আবার তাহা অপেক্ষা অধিক। অতল জলধিতলে গিয়াও তাহারা সুস্থির হয় নাই। তোমার দন্তপাতি দেখিয়া মনের ঘূণায় তাহারা শুক্তিগর্ভে গিয়া আশ্রয় গ্ৰহণ করিয়াছে।” মনে আছে কি, রাজাবাবু! এইরূপ কতপ্রকার উপমা দিয়া তুমি আমার সৌন্দর্ঘ্যের প্রশংসা করিতে?” কপালে করাঘাত করিয়া, সোনা-বীে পুনরায় বলিলেন,-“হায় হায়! আমি কি অভাগিনী যে, সে ভালবাসা হইতে আমি বঞ্চিত হইলাম। তোমার ভালবাসার কথা শুনিব বলিয়া কোন কোন দিন আমি মান করিয়া বসিয়া থাকিতাম। কত সুমিষ্ট সম্ভাষণে তুমি আমার সেই মান ভাঙ্গিতে চেষ্টা করিতে? সেসব কথা শুনিয়া মনে আমার আনন্দ হইত; কিন্তু আরও আদর পাইব বলিয়া আমি মুখ গভীর করিয়া থাকিতাম। যখন দেখিতাম যে, তোমার ঘোরতর ক্লেশ হইতেছে, তখন ভাবিতাম, আর একবার সাধ্যসাধনা করিলেই মান ঘুচাইয়া তোমার সহিত কথা কহিব। কিন্তু যখন পুনরায় সুমিষ্টস্বরে তুমি আমাকে সাধিতে, তখন এই হতভাগিনী অভিমানিনী হইয়া ঘোমটা টানিয়া মুখ আবৃত করিয়া বসিয়া থাকিত। শেষে যখন আমি মান ংবরণ করিতাম, তখন রাজাবাবু! তুমি স্বৰ্গসুখ লাভ করিতে। প্ৰফুল্লবদনে গ্ৰীতিপূর্ণলোচনে তখন যেরূপ আমার প্রতি দৃষ্টি করিতে, আজ একবার—কেবল একবার, নিমেষমাত্রের জন্য,-সেই মধুরভাবাপন্ন কটাক্ষপাত করিয়া এ দুঃখিনীর দুঃখ নিরীক্ষণ করা। যাহার একটু মাথা ধরিলে Գ88 দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com/f4র্জািপঠা"ৰ *********