পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“ও-ঘরে যাইতে আজ্ঞা করিতেছ? যেস্থান খুকী একেলা পড়িয়া থাকিত, সেই স্থান পুনরায় আমাকে দেখিতে বলিতেছ? আচ্ছা রাজাবাবু, চল তবে ও-ঘরে যাই।” দুই ঘরের মাঝে দ্বার ছিল। সে দ্বারা দিয়া সোনা-বীে অপর ঘরে প্রবেশ করিলেন। যে ঘরে রায়-গৃহিণীর মৃত্যু হইয়াছিল, এ সেই ঘর। বিজয়বাবু, সুবালা, পিসীমা, বড়ালমহাশয় ও বড়াল-গৃহিণী, সকলেই অবাক হইয়া তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ সেই ঘরে গমন করিলেন। সোনা-বীে বলিলেন, — “এই খাটের উপর আমি শয়ন করিতাম। খুকী আমার কাছে থাকিত। নীচে ঐ স্থানে মন্দাকিনী শুইয়া থাকিত। “খুকী ছয় মাসের হইল। সে হাসিতে শিখিল । তাহার শিশুমুখের হাসি ও তোমার সহাস্যবন্দন একত্র হইয়া কেমন এক অপূৰ্ব্ব শোভা উৎপাদন করিত। কিন্তু তখন আমি অন্ধ ছিলাম। সে শোভা তখন আমার নয়নগোচর হইত না। বরং রাজাবাবু, মনে মনে তোমাকে আমি তখন বিদ্রুপ করিতাম । আমি ভাবিতাম- “এত কেন? কন্যা কি কাহারও হয় না!” “খুকী ছয় মাসের হইল। দীত উঠিবার উপক্রম হইল। সেই সূত্রে তাহার জুর হইল। সমস্ত দিন তুমি তাহাকে বুকে করিয়া রহিলে। রাত্ৰিতে তাহাকে লইয়া আমি শয়ন করিলাম। খুকীর অসুখ; তথাপি মন্দাকিনীকে আমি ছুটি দিলাম। গ্রামের ভিতর আপনার বাড়ী সে চলিয়া গেল। দুই শয়নাগারের মধ্যস্থলের দ্বার তুমি খোলা রাখিয়াছিলে। আস্তে আস্তে আমি বন্ধ করিয়া দিলাম। খুকীর অসুখ । রাক্ষসী মা, আমি তাহাকে ফেলিয়া আমি চলিয়া গেলাম! “শেষ রাত্রিতে বাটীতে ফিরিয়া আসিলাম। দেখ্রিলাম যে, আমার শয়নঘরে আলো জুলিতেছে। তখন আমার শরীরের ও মনের স্থিরতু না। আমার মুখ দিয়া গন্ধ বাহির হইতেছিল । আলো দেখিয়া আমার বিকল বীরুৎসাির্নকটা স্থির হইল। সভায়ে আমি ঘরের ভিতর প্রবেশ করিলাম। দেখিলাম যে, হােমিওপ্যাথি ঔষধের বাক্সটি নিকটে রাখিয়া খুকীর। পার্থে তুমি বসিয়া আছ। একহাতু মুঠুকুঞ্জি খুকী তোমার হাত ধরিয়া আছে। মুখ তুলিয়া একবারমাত্ৰ তুমি আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিলে। তাহার পর পুনরায় মস্তক অবনত করিয়া খুকীর মুখপান চাহিয়া রহিলে। ভয়ে ভয়ে আমি খুকীর অপর পার্শ্বে গিয়া বসিলাম। তাহার অন্য হাতটি আমি ধরিলাম। আমার হাত সে মুঠা করিয়া ধরিল না। রাক্ষসী মাতাকে স্পর্শ করিতে যেন তাহার ঘূণা বােধ হইল! “তুমি কোন কথা বলিলে না। একটি কথাও তুমি আমার সহিত কহিলে না। তখনও না, পরেও না। খুকীর তাড়কা হইল। অনেকক্ষণ পরে সেবারের তাড়কা হইতে সে অব্যাহতি পাইল । “প্ৰাতঃকালে ডাক্তার আসিল । কোন ফল হইল না। আরও তিনবার তাড়কা হইল। রাক্ষসী মাকে পরিত্যাগ করিয়া এ পাপ-ইহধাম হইতে খুকী চলিয়া গেল! হায় রাজাবাবু, তোমার সহিত আমার সে সামান্য বন্ধন ছিল, জনমের মত তাহাও ছিন্ন হইয়া গেল।” খাটের উপর উপবেশন করিয়া, দুই হস্ত দ্বারা মুখ ঢাকিয়া সোনা-বীে পুনরায় ক্ৰন্দন করিতে লাগিলেন। কিছুকাল পরে চক্ষু মুছিয়া বলিতে লাগিলেন,- “সেইদিন হইতে আমরা বুঝিলাম যে, আর আমাদের মঙ্গল নাই। আমরা আর কে?— গুরুদেব ও আমি । ধ্যানস্থ হইয়া শুরুদেব দেখিলেন যে, তুমি দেবীর ভক্ষ্য। তোমাকে বলি দিতে পারিলে অক্ষয় পুণ্য লাভ হয়। গুরুদেব পুনরায় ধ্যানস্থ হইয়া দেখিলেন যে, তুমি শূলিনী দেবীর ভক্ষ্য। তোমাকে ভক্ষণ করিবার নিমিত্ত শূলিনী দেবী মুখবাদন করিয়া আছেন।” পাপের পরিণাম দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com ~ Գ8Գ