পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিজয়বাবু, বড়ালমহাশয় ও বিনয় পরামর্শ করিয়া স্থির করিলেন যে, সমুদয় গ্রাম ও গ্রামের চারিদিকে নদী, নালা, মাঠ, জলা সকল স্থান তন্ন তন্ন করিয়া সেই রাত্ৰিতে অনুসন্ধান করিতে হইবে। তৎক্ষণাৎ শত শত মশাল প্রস্তুত হইতে লাগিল। পুরাতন কাপড়, নূতন কাপড়, যাহা সম্মুখে পাইলেন, পিসীমা তাহা বাহির করিয়া দিলেন। সেই সমুদয় কাপড় ছিড়িয়া মশাল প্ৰস্তৃত হইল। বাড়ীতে যত তৈল ছিল, পিসীমা তাহা বাহির করিয়া দিলেন। তাহার পর গ্রামে যাহার বাড়ীতে যতটুকু তৈল ছিল, আপনি আপনি ঘর হইতে লোকে তাহা বাহির করিয়া দিল। সে রাত্ৰিতে গ্রামে আর একফোঁটা তৈল রহিল না। গ্রামে যতগুলি নীেকা ও ডোঙা ছিল, তাহতে বসিয়া চারিদিকে লোক ধাবিত হইল। অবশেষে গ্রামে যত কলাগাছ ছিল, সে সমুদয় কাটিয়া লোকে ভেলা প্ৰস্তুত করিল। যাহাদের কদলীবৃক্ষ, তাহারা অণুমাত্র আপত্তি করিল না, বরং আহাদসহকারে আপনি আপনি কলা-গাছ সকলে দেখাইয়া দিতে লাগিল। নীেকায়, ডোঙায় ও কলার ভেলায় বসিয়া জলপথে লোক চারিদিক সুবালার অন্বেষণে দীেড়িল। কে কোন দিকে যাইবে, বড়ালমহাশয় তাহা স্থির করিয়া দিলেন। নীেকা, ডোঙা অথবা ভেলায় যাহাদের স্থান হইল না, তাহারা পদব্ৰজে উচ্চ ভূমিসমূহে অনুসন্ধানে প্ৰবৃত্ত হইল। উত্তর, দক্ষিণ, পূৰ্ব্ব, পশ্চিম, সকল দিকে শত শত লোক প্রেরিত হইল। চারি পাঁচ জন লোকের সহিত বিনয় একখানি নীেকাতে করিয়া শিবমন্দিরের দিকে গমন করিলেন । আর একখানি নীেকাতে কতোগুলি লোকের সহিত বড়ালমহাশয় গ্রামের দক্ষিণ দিকের মাঠে গমন করিলেন। বিজয়বাবু বিদেশী লোক। তিনি পথঘাট জানেন না। স্ত্রীলোকদিগের রক্ষণাবেক্ষণের নিমিত্ত বড়ালমহাশয় তাহাকে বাটীতে রাখিয়া গেলেন। ညှိုးမဲ၊ গ্রামে একজন গুরুঠাকুর আসিয়াছিলেন। ভূর্তের দৌরাত্ম্যের কথা শুনিয়া ক্রোধানলে তাহার। সৰ্ব্বশরীর জুলিয়া উঠিল। ব্ৰাহ্মণ কি হয়, তিনি একালের গুরুঠাকুরসভ্যভব্য নব্য বীরপুরুষ। সে কালের নূতন বিজ্ঞানশাস্ত্ৰ জোড়া দিয়া তিনি গুরুগিরি করেন। টিকিশুন্য মস্তক হইতে ডুৎ-শক্তি বাহির হইয়া যায়, তাহা তিনি বিলক্ষণ অবগত আছেন। গ্রামের লোককে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, — “কুপো আছে?” সকলে জিজ্ঞাসা করিল,— “কুপো কেন?” আরক্তনয়নে নব্য গুরুঠাকুর উত্তর করিলেন,— “কুপো কেন? আমি নৃসিংহমন্ত্র জানি। নৃসিংহ কে তা জােন?” “চত্ত্বারো বাসুদেবাদ্যা নারায়ণ নৃসিংহকীে। হয়গ্ৰীবো বরাহশচব্ৰহ্মা চেতি নবেদিতাঃ৷” নৃসিংহমন্ত্রবলে খাদা ভুতকে ধরিয়া কুপোতে বন্ধ করিয়া আনিব। তখন তোমরা আমার বিক্রম দেখিবে—আমি সাক্ষাৎ জাগ্ৰত গুরু । গুরুকে মানুষ জ্ঞান করিতে নাই কেন, তখন তোমরা বুঝিবে।” গ্রামে কুপো ছিল না। কাজেই একটি বোতল লইতে হইল। খাদা ভুতকে ধরিয়া সেই বোতলে বন্ধ করিয়া তিনি আনিবেন। গুরুঠাকুর বলিলেন,- “নৃসিংহের মন্ত্র পড়ি মারিব জল ঝাঁটি। হুহুঙ্কার শব্দে মোর ব্ৰহ্মাণ্ড যাবে ফাটি৷” খাদা ভূতের উপর তর্জন-গৰ্জ্জন করিতে করিতে গুরুঠাকুর বড়ালমহাশয়ের নীেকায় গিয়া VO দুনিয়ার পাঠক এক হও! ৩ www.amarboi.comf:লোকনাথ রচনাসংগ্ৰহ