পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“ধনুকধারী। নদীর মাঝখানে তুমি নীেকা আনিলে কেন?” ধনুকধারী উত্তর করিল,- “স্রোতে ভাসাইয়া আনিল, আমি কি করিব।” সুবালা বলিলেন,- “নীেকা ফিরাও, এখনি নীেকা ফিরাও। যেস্থানে হয়। কিনারায় আমাকে নামাইয়া দাও। যেমন করিয়া পারি, সে স্থান হইতে আমি বাড়ী যাইব ।” ধনুকধারী বলিল,— “বাগানের ও ধারে নীেকা লাগাইব ।” সুবালা বলিলেন,- “না, তাহা হইবে না। কিনারার দিকে তুমি নীেকা লইয়া যাও। আমি নামিয়া যাইব ।” ধনুকধারী কোন উত্তর করিল না। নীেকা ফিরাইল না। কিনারায় দিকে সে লইয়া গেল না। সুবালা একবার মনে করিলেন যে, “জলে ঝাঁপ দিয়া পড়ি।” কিন্তু নীেকা এখন কোথায় আসিয়াছিল এবং কিনারা কতদূর, অন্ধকারে তাহা তিনি বুঝিতে পারিলেন না। সুবালা বলিলেন,- “আজ তুমি পুনরায় মদ খাইয়াছ?” ধনুকধারী উত্তর করিল,- “হাঁ খাইয়াছি। আবার এই দেখ, খাই ।” এই কথা বলিয়া নীেকার ভিতর হইতে সে বোতল বাহির করিল ও ছিপি খুলিয়া কতক মদ হাড়-হড় করিয়া আপনার মুখে ঢালিয়া দিল। সুবালা পুনরায় বলিলেন, — “নীেকা শীঘ কিনারার দিকে লইয়া চল, না লইয়া গেলে টীৎকার করিয়া আমি লোক ডাকিব ।” ধনুকধারী বলিল,— “লোক ডাকিবে? বটে। তবে এখুনই আমি নীেকা ডুবাইয়া দিব।” এই বলিয়া নীেকার একাধারে সে এক পা ও র অপর পা রাখিয়া দোল দিতে লাগিল। নীেকার এ ধার—পুনরায় সে ধার অবুৰন্ত হইয়া জলমগ্ন-প্ৰায় হইতে লাগিল। দোল দিতে দিতে ধনুকধারী এক প্রকার বিকট হাস্ক্রিসিতে লাগিল। সে মনে করিয়াছিল যে, ভয় পাইয়া র নিকট কাকুতি মিনতি করিবেন। কিন্তু সুবালা কিছুই করিলেন না। “এ নরাধাম আর কি বলিব!”-এইরূপ ভাবিয়া সুবালা চুপ করিয়া বসিয়া রহিলেন ও মনে মনে উগবানকে ডাকিতে লাগলেন। কিছুক্ষণ দোল দিয়া ধনুকধারী পুনরায় স্থির হইয়া দাঁড়াইল। বোতলের ছিপি খুলিয়া আর একবার মদ্য পান করিল। পুনরায় সে বলিতে লাগিল,- “কেবল এক অঙ্গুলি থাকিতে ছাড়িলাম। নীেকার পাশ যদি আর এক আঙ্গুল নীচু করিতাম, তাহা হইলে এতক্ষণ বাছা! তোমাকে হাবুডুবু খাইতে হইত। আমার ধৰ্ম্মজ্ঞান আছে, মনে দয়া আছে, তাই এ অকূল পাথরে তোমাকে ভাসাইতে বিলম্ব করিলাম। চীৎকার করিবে? করিয়া দেখ—কে তোমার চীৎকার শুনিতে পাইবে? সুবালা চুপ করিয়া রহিলেন। মনে মনে ভগবানকে ডাকিতে লাগিলেন। নীেকা আরও কিছুদূর স্রোতে ভাসিয়া গেল। নদীর দক্ষিণ পার্শ্বে এক বিস্তৃত নিম্নভূমির মাঠ আছে। নদীতে বান আসিলে ইহা গভীর জলে পূর্ণ হয়। ধনুকধারী নীেকা লইয়া এই মাঠের ভিতর প্রবেশ করিল। সমস্ত নিম্নভূমি এক্ষণে জলপ্লাবিত হইয়াছিল। সমুদ্রের ন্যায় চারিদিকে জল ধুধু করিতেছিল। মাঝে মাঝে এক একটি গাছ দ্বীপের ন্যায় দাড়াইয়াছিল। সম্মুখে একটি তাল গাছ দেখিতে পাইয়া নীেকা লইয়া ধনুকধারী তাহার নিকট গমন করিল। গাছটি অধিক উচ্চ নহে। তাহার কাণ্ডে পাঁচ ছয় হাত জলমগ্ন হইয়াছিল। অবশিষ্ট অংশ পাপের পরিণাম দুনিয়ার পাঠক এক হও! ... www.amarboi.com ~ RG