পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধনুকধারী পুনৰ্ব্বার সুরা পান করিতে গমন করিল। পুনরায় সুবালার নিকট আসিয়া বসিল। তাহার পা টিলিতেছিল। তাহার কথায় জড়তা হইয়াছিল। উকি তুলিতে তুলিতে সে বলিতে লাগিল,- “এ ছোরার আর আবশ্যক নাই। ছোরা আমি এই ফেলিয়া দিলাম।” বক্ষঃস্থল হইতে ছােরা বাহির করিয়া ধনুকধারী দূরে জলে ফেলিয়া দিল। তাহার পর পুনরায় বলিতে লাগিল,- “ছোরার সহায়তায় আর আমাকে আত্মহত্যা করিতে হইবে না। এই জলের ভিতর অবিলম্বে আমার প্রাণত্যাগ হইবে। আমি তোমাকে বধ করিব না, তুমি আমার প্রাণবধ করিবে। আমি সীতার জানি, জলে আমার সহজে মৃত্যু হইত না। কিন্তু তুমি আমার মৃত্যুর কারণ হইবে। নীেকা যেই ডুবিবে, আর সেই সঙ্গে আমরাও দুই জনে জলে নিমগ্ন হইব। জলমগ্ন লোকেরা তৃণগাছটি পৰ্যন্ত ধরিতে চেষ্টা করে। আমাকে নিকটে পাইয়া তুমি আমাকে জড়াইয়া ধরিবে। তোমার হাত হইতে আমি আপনাকে ছাড়াইতে চেষ্টা করিব না। সঙ্গে সঙ্গে দুই জনে জলমগ্ন হইব। দুই হাতে তুমি আমাকে আলিঙ্গন করিয়া থাকিবে, সেই অবস্থায় আমার সুখের বিষয় কি আছে। স্ব-ইচ্ছায় তুমি আমার সহিত সহ-মরণে যাইবে। তুমি আমার পতিব্ৰতা সতী হইবে। অরুন্ধতীকে লইয়া বশিষ্ঠ যেরূপ স্বর্গে বাস করিতেছেন, তোমাকে লইয়া সেইরূপ আমিও যুগ যুগান্তর-কত মন্বন্তর-স্বৰ্গধামে বাস করিব। হাঃ হাঃ, সুবালা আমার সহিত সতী হইবে। এ কথা মনে করিলে হাসি পায়, দুঃখ হয় না। সুবালা কোন উত্তর করিলেন না। নীরবে বসিয়া তিনি ভগবানকে ধ্যান করিতে লাগিলেন। কল কল শব্দে নীেকায় ভিতর জল প্ৰবেশ করিতে । জলে পূর্ণ হইতে আর অল্প বাকী রহিল। দিয়াশলাই জ্বালাইয়া ধনুকধারী সুবালাকে । সে বলিল,- “সুবালা! এই দেখ, আর বিলম্ব নাই। নীেকা এখনি জলমগ্ন হইবে দুইজনে আমরা স্বৰ্গে গমন করিব। উরলাম । ইহা অপেক্ষা আর আনন্দের বিষয় কি ধনুকধারী যখন দিয়াশলাই SS সুবালা দেখিলেন যে, সত্য সত্যই আর বিলম্ব নাই, নীেকা প্রায় সম্পূর্ণ জলে পূর্ণ হইয়াছে, অল্পমাত্র জাগিয়া আছে, দুই চারি মিনিটের মধ্যে ইহা ডুবিয়া যাইবে, দুই চারি মিনিটের মধ্যেই তাঁহার মৃত্যু হইবে। সুবালা ভাবিলেন,-পাপিষ্ঠ যাহা মনে করিয়াছে, তাহা আমি কিছুতেই করিব না। পাপিষ্ঠকে কিছুতেই আমি স্পর্শ করিব না। স্রোতো-বলে দূরে ভাসিয়া যাইতে চেষ্টা করিব। হে জগদীশ্বর! তোমার যাহা ইচ্ছা!” ভগবানকে ডাকিবার সময় সুবালা আকাশের দিকে চাহিয়া দেখিলেন। ধনুকধারীর হাতে তখনও দিয়াশলাইয়ের কাটি জুলিতেছে। সুবালার দৃষ্টি তালগাছের উপর পড়ল। শুষ্ক বড় বড় অনেকগুলি পত্র তালগাছকে বেষ্টন করিয়া নিম্নমুখ হইয়া ঝুলিতেছিল। সুবালা তাহা দেখিলেন। সিগারেট ও দিয়াশলাইয়ের বাক্স সেই স্থানে রাখিয়া ধনুকধারী পুনরায় মদ্য পান করিতে গেল। সেই অবসরে সুবালা খপ্‌ করিয়া দিয়াশলাইয়ের বাক্স তুলিয়া লইলেন। পায়ের আঙ্গুলির উপর ভর দিয়া তিনি উচ্চ হইয়া দাঁড়াইলেন, ও দিয়াশলাই জ্বালাইয়া নিম্নমুখ তালপত্রে অগ্নি দিয়া দিলেন। উপর পাহাড়ে বৃষ্টি হইয়াছিল, সেই জন্য নদীতে বান আসিয়াছিল। কিন্তু এ অঞ্চলে কয়েক দিবস বৃষ্টি হয় নাই, সে জন্য তালপত্রগুলি সম্পূর্ণ শুল্ক হইয়া ছিল। দিয়াশলাই উঠিল। চারিদিক বহু দূৱ পৰ্যন্ত আলোকিত হইল। তালগাছের মাথায় কে একজন বসিয়া ছিল। নদীতে বান আসিবার পূৰ্ব্বে সে এই মাঠে

                  • দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com ~ ԳՆՏ