পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চীৎকার করিয়া সুবালা বলিলেন, —“কে গো! নীেকা লইয়া যাও? আমি সুবালা।” এই কয়টি কথা বলিবামাত্র, বাম দিক হইতে উত্তর আসিল,- যাই, যাই, ভয় নাই।” দক্ষিণ দিক হইতেও সেই মুহূৰ্ত্তে উত্তর আসিল,- “ভয় নাই, ভয় নাই, যাই, যাই।” উত্তর দিকে বিনয়ের ও দক্ষিণ দিকে বড়ালমহাশয়ের কণ্ঠস্বর বলিয়া বোধ হইল। ব্ৰহ্মরােক্ষসের নিষ্ঠুর স্বভাব ও গুরুঠাকুরের নিদারুণ খেদ শুনিয়া গ্রামের লোক নীেকা ফিরাইয়া পলায়ন করিবার উপক্ৰম করিতেছিল। এমন সময় সুবালার কাতর ডাক সকলে শুনিতে পাইল। বড়ালমহাশয় তখন গ্রামবাসীদিগকে ধিক্কার দিয়া ভৎসনা করিতে লাগিলেন। তিনি বলিলেন,- “ঐ শুন, সুবালা দিদির কণ্ঠস্বর। ঘোরতর বিপদে পড়িয়া তিনি আমাদিগকে ডাকিতেছেন। আমি তোমাদিগকে বার বার বলিতেছি যে যাহার হু হু শব্দ শুনিলে, সে ভূত নহে; সে জীয়ন্ত মানুষ, সে ক্ষিপ্ত। উন্মাদের হাতে সুবালা দিদিকে ফেলিয়া তোমরা পলায়ন করিবে? ছি, ছি, ধিক তোমাদিগকে!” গ্রামের লোক লজ্জিত হইয়া নীেকা ফিরাইয়া যেদিকে আগুন জুলিতেছিল, যেদিক হইতে খাদা ভূতের হু হু শব্দ ও সুবালার কণ্ঠস্বর আসিয়াছিল, সেই দিকে দ্রুতবেগে তাহারা ধাবিত হইল । কিন্তু দুৰ্ভাগ্ৰাক্ৰমে বিনয় ও বড়ালমহাশয়ের নীেকা নিকটে পৌঁছিতে না পৌঁছিতে ধনুকধারী ও খাদা ভূত জড়ােজড়ি করিয়া দুইজনে জলে পতিত হইল। জলে পড়িবামাত্র সেই স্থানে ডুবিয়া গেল। তালপাতার আলোকে সুবালা সেই স্থানে কেবলুগুটিকত বুদবুদ দেখিতে পাইলেন। তাহাদের আর কোন চিহ্ন তিনি দেখিতে পাইলেন দেখিবার অবকাশ ছিল না। নীেকাখানি জুহেন্ত খীদা ভূতের ধনুকধারীর হুড়াহুড়িতে সে স্যমুণ্ঠ অংশটি অতি সত্বর পূর্ণ হইয়া গেল। নীেকা জলমগ্ন হইল। যে জীর্ণ ও পুরাতন তালগাছে নীেকা বাধা ছিল, জলের ভারে তাহা ছিড়িয়া গেল। ܠ ܐ সুবালা ডুবিয়া গেল। তিনি অল্প অল্প সীতার জানিতেন। হাত পা নাড়িয়া একবার তিনি ভাসিয়া উঠিলেন। মাথা তুলিয়া কিছুদূরে প্রজুলিত তালগাছ তিনি দেখিতে পাইলেন। কিন্তু স্রোত তাঁহাকে গাছ হইতে দূরে ভাসাইয়া লইয়া চলিল। পূৰ্ব্বাপেক্ষা নিকট হইতে পুনরায় আশ্বাসবােক্য আসিল,- “ভয় নাই, ভয় নাই! যাই, যাই!!!" বিনয়ের নীেকা প্ৰথম আসিয়া তালগাছের নিকট পৌঁছিল। সে স্থানে কাহাকেও না দেখিয়া তিনি আশ্চৰ্য্যানিত হইলেন। তালপাতায় কে আগুন দিল! সুবালার কণ্ঠস্বর তিনি শুনিয়াছিলেন। সুবালা কোথায় গেলেন!। এইরূপ ভাবিতে ভাবিতে তিনি চারিদিক নিরীক্ষণ করিয়া দেখিতে লাগিলেন। কিছুদূরে একটা কৃষ্ণবর্ণের গােলাকার পদার্থ সহসা জলের উপর ভাসিয়া উঠিল। দ্রুতবেগে সেই স্থানে বিনয় নীেকা পরিচালিত করিলেন। কৃষ্ণবর্ণের সেই গোলাকার পদার্থ সুবালার মস্তক। হাবুডুবু খাইতে খাইতে সুবালা স্রোতে ভাসিয়া যাইতেছিলেন। তাড়াতাড়ি বিনয় তাঁহাকে নীেকার উপর তুলিয়া ফেলিলেন। নীেকায় উঠিয়া সুবালা কাঁদিতে লাগিলেন। তাঁহার মুখ দিয়া কথা বাহির হইল না। তথাপি অতি কষ্টে তিনি বলিলেন, — ঐ “তালগাছে।-- ধনুকধারী ও কালা-বাবা ডুবিয়াছে?” নীেকা লইয়া বিনয় তালগাছের নিকট ফিরিয়া আসিলেন। সুবালা হাত বাড়াইয়া

                  • দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com ~ AAN