পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাঁচশত তিপ্লান্ন বৎসর। চালাঘরের সম্মুখে যে আমগাছ আছে, চেলারা তাহার ডালে সাধুর দুই পা বঁধিয়া দিত। প্রতিদিন প্ৰাতঃকালে এক ঘণ্টাকাল নীচের দিকে মুখ করিয়া সাধু বুলিয়া থাকিত। চারিদিকে হৈ-হৈ পড়িয়া গেল। যাহারা বি-এ, এম-এ পাস করিয়াছে, সেই ছোড়ারা আসিয়া সাধুর কেহ পা টিপিতে লাগিল, কেহ বাতাস করিতে লাগিল, সকলেই পাদোদক খাইতে লাগিল। একখানি হুজুগে ইংরেজী কাগজের লোক আসিয়া সাধুকে দর্শন করিল ও তাহাদের কাগজে সাধুর মহিমা গান করিয়া দীর্ঘ দীর্ঘ প্ৰবন্ধ লিখিতে লাগিল। ফল কথা, দেশের লোকের ভক্তি একেবারে উথলিয়া পড়িল। সাধুর মাথার নিম্নে চেলারা একটি ধামা রাখিল; সেই ধামায় পয়সা-বৃষ্টি হইতে লাগিল।” লম্বোদর বলিলেন, — “তুমিও সেই হুজুগে দু’পয়সা লাভ করিয়াছিলে!” ডমরুধর বলিলেন,- “সে জমি আমার, সে চালা আমার, সে আমগাছ আমার; কেন আমি লাভ করিব না? আমি সাধুকে গিয়া বলিলাম,- “ঠাকুর! সন্ন্যাসী মোহান্তের প্রতি আমার যে ভক্তি নাই, তাহা নহে। তবে কি জান, আমি বিষয়ী লোক। তুমি আমার জমিতে আস্তানা গাড়িয়াছ। দু’পয়সা বিলক্ষণ তোমার আমদানি হইতেছে। ভূস্বামীকে ট্যাক্স দিতে হইবে।” সাধু উত্তর করিলেন, — “আমরা উদাসীন। আমি নিজে বায়ু ভক্ষণ করি। চেলারা এখন যৎকিঞ্চিৎ আহার করে। দীন-দুঃখীকে আমরা কিছু দান করি। কোন পরিব্রাজক আসিলে তাহার সেবায় কিঞ্চিৎ অর্থব্যয় করি। সেজন্য পুণ্যাত্মা ভক্তগণ যাহা প্ৰদান করে, আমার শিষ্যদ্বয় এ স্থানে খরচের জন্য তাহার অৰ্দ্ধেক রাখিয়া অবশিষ্ট ধন প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় তোমাকে দিয়া আসিবো।” বলা বাহুল্য যে, আমি এ প্রস্তাবে সম্মত হইলাম। কােনদিন চারি টাকা কােনদিন পাঁচ টাকা আমূহূৰ্ত্তীর্ভ হইতে লাগিল। সন্ন্যাসীর প্রতি আমার প্রগাঢ় ভক্তি হইল। যাহাতে তাহার প্রসাদৃশুষ্ঠপূক্ত আরও বৃদ্ধি হয়, দেশের যত উজবুক ২ষ্ট্ৰচষ্টা করিতে লাগিলাম । মনে মনে সঙ্কল্প করিলাম অধিক দিন থাকিতে পারে না। হুজুগ একটু পুরাতন হইলেই বাঙ্গালী পুনরায় নূতন হুজুগের সৃষ্টি করে। অথবা এই বঙ্গভূমির মাটীর গুণে আপনা হইতেই নূতন হুজুগের উৎপত্তি হয়। এই সময় এ স্থান হইতে চারি ক্রোশ দূরে পাঁচগেছে রসিক মণ্ডলের সপ্তমবৰ্ষীয়া কন্যার স্কন্ধে মাকালঠাকুর অধিষ্ঠান হইলেন। রসিক মণ্ডল জাতিতে পোদ। মাকালঠাকুরের ভরে সেই কন্যা লোককে ঔষধ দিতে লাগিল। দেবদত্ত ঔষধের গুণে অন্ধের চক্ষু, বধিরের কৰ্ণ, পঙ্গুর পা হইতে লাগিল। বোবার কথা ফুটিতে লাগিল। কতকগুলি সুস্থ লোককে কানা খোড়া, হাবা কালা, জোরো অম্বুলে সাজাইতে হয়, তা না করিলে এ কাজে পাসার হয় না। তুলসীর মালা গলায় দিয়া সেই ইংরাজী কাগজের লেখকও সেই স্থানে গিয়া উপস্থিত হইল। ভক্তিতে গদগদ হইয়া কত কি তাহাদের কাগজে লিখিয়া বসিল। বি-এ, এম-এ পাস করা ছোড়ারা আবার সন্ন্যাসীকে ছাড়িয়া সেই পোদ ছুড়ীর পাদক-জল খাইতে গেল। কাতারে কাতারে সেই গ্রামে লোক ভাঙ্গিয়া পড়িল। রসিক মণ্ডলের ঘরে টাকা-পয়সা আর ধরে না। আমার সন্ন্যাসীর আস্তানা ভোঁ ভোঁ হইয়া গেল। রসিক মণ্ডলের মত আমার কেন বুদ্ধি যোগায় নাই, আমি কেন সেইরূপ ফন্দি করি নাই, আমি কেন একটা ছোট ছুড়ীকে বাহির করি নাই, সেই আপশোসে আমার বুক ফাটিয়া যাইতে লাগিল। এইরূপ দুঃখে আছি, এমন সময় একজন চেলা সন্ন্যাসীর হাত ধরিয়া আমার বাড়ীতে ԳԵ8 fi:Ilă zi, o go sel - www.amarboicom**