পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৮২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ টাকে ঠোকর এই মুহূৰ্ত্ত হইতে আমি সম্পূর্ণভাবে আত্মবিস্মৃত হইয়া পড়িলাম। যে বুদ্ধির দ্বারা অসুরদিগকে জয় করিয়া দেবগণকে নির্ভর করিয়াছিলাম, সেই দেববুদ্ধি আমার লোপ হইয়া গেল। আমি ঠিক মনুষ্যের মত নিমেষপূর্ণ নয়নে চারিদিকে ফ্যাল ফ্যাল করিয়া চাহিয়া দেখিলাম। যাহা দেখিলাম, তাহা দেখিয়া আমি হতভম্ব হইয়া পড়িলাম। লম্বোদর প্রভৃতি জিজ্ঞাসা করিলেন,- “কি দেখিলে?” ডমরুধর উত্তর করিলেন,- “বলিব কি ভাই আর আশ্চৰ্য্য কথা! আমি দেখিলাম যে, স্বয়ং মহাদেব গণেশের হাত ধরিয়া প্ৰতিমার সম্মুখে দাড়াইয়া আছেন। তাঁহার স্কন্ধে কিন্তু কাৰ্ত্তিক নাই। কি করিয়া শিব কাৰ্ত্তিককে লাইবেন? ডমরুপে এইমাত্র কাৰ্ত্তিক নদীর সহিত পোটলা কড়াকড়ি করিতেছিলেন। পশ্চাতে দেবী ছলছল নয়নে দণ্ডায়মানা আছেন। উঠানে সজ্জিত দোলা রহিয়াছে। উড়ে ভূতগণ দোলার পার্শ্বে দাঁড়াইয়া বলিতেছে- নদী কীেঠি গলা, দের হাউচি ঠিকে জলদি করা। ইত্যাদি। দেবী মহাদেবের কানে চুপি চুপি কি বলিলেন। কি বলিলেন, তখন আমি বুঝিতে পারি নাই। কিন্তু বােধ হয়। পৃথিবীতে আমাকে আরও অনেক দিন রাখিয়া শিক্ষা দিতে তাঁহারা পরামর্শ করিলেন। দুরন্ত বালককে শিক্ষা দিবার নিৰ্ত্তিং মনিচ্ছা সত্ত্বেও মাতা-পিতাকে কঠিন হইতে হয় । (Ο) আমি এখন সকল কথা বুঝিলাম, গত বৎসর রাত্রি থাকিতে দশমী পড়িয়াছিল; সেই শুভূ পূজার দিন ৫৮ দণ্ড নবমী ছিল। দুই দণ্ড ল’মা কৈলাস পৰ্ব্বতে প্ৰত্যাগমন করিতেছিলেন। গত বৎসর মা দোলায় গমন করিয়া সেজন্য মহামারী হইয়াছিল। উঠানে দোলা রাখিয়া উড়ে বেহারা ভূতগণ সেই জন্য র করিতেছিল। প্রথম আমি নদীদাদার পায়ে পড়িয়া ক্ষমা প্রার্থনা করিলাম। তখন অবশ্য নদীদাদা বলিল তাঁহাকে সম্বোধন করি নাই। তিনি বলিলেন, — “একথাবা থুতু তুমি আমার হাতে দিয়াছ, তোমার সহিত কথা কহিতে ইচ্ছা হয় না ।” তাহার পর শিবের পায়ে পড়িয়া আমি স্তব করিতে লাগিলাম। সন্তুষ্ট হইয়া শিব বলিলেন, — “নদীর শাপ আমি মোচন করিতে পারি না। অন্য বর প্রার্থনা কর।” কি বর প্রার্থনা করিব, তখন আমি খুঁজিয়া পাইলাম না। আমি বলিলাম,- “ভগবান। যদি বর দিবেন, তাহা হইলে আপনার একটি ভূত আমাকে প্ৰদান করুন।” হাসিয়া শিব বলিলেন,- “ছোটখাটাে ভাল মানুষ একটি ভূত তোমার নিকট আমি পাঠাইয়া দিব। কিন্তু তাহাকে তুমি অধিক দিন রাখিতে পরিবে না।” তাহার পর দেবীর পাদপদ্মে পড়িয়া আমি স্তবস্তুতি করিতে লাগিলাম। সন্তুষ্ট হইয়া দেবী বলিলেন, — “ডমরুধর! তুমি আমার পরম ভক্ত। সেজন্য সশরীরে তোমার পূজা গ্ৰহণ করিতে আমরা আসিয়াছিলাম। এ বঙ্গদেশে সহস্ৰ সহস্ৰ লোক আমার পূজা করে। কিন্তু তাঁহাদের অনেকে মুর্গি ভক্ষণ করে। সেজন্য তাঁহাদের পূজা আমি গ্ৰহণ করি না। তোমার মাথার মাঝখানে যদি টাক না থাকিত, তাহা হইলে তুমি টিকি রাখিতে। দেখ, আগামী বৎসরে তুমি অতি সংক্ষেপে আমার পূজা করিবে। এত দ্রব্যাদি দিলে নদী বহিয়া লইয়া যাইতে পারে না। ভিক্ষ-চৰিত দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com ~ bryo