পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৮৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ ডমরুধারের মেমের পোষাক আমি ভাবিলাম, আবার বা প্রহরী খাইতে হয়। সেই ভয়ে আমি রুদ্ধশ্বাসে দীেড়িলাম। “ঐ যাইতেছে, ঐ যাইতেছে", বলিয়া কেহ কেহ আমার পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবিত হইল। কিছুদূর গিয়া আমি আর দৌড়িতে পারিলাম না। এক স্থানে নিবিড় ভেরাণ্ডার বেড়া ছিল। তাহার ভিতর প্ৰবেশ করিয়া আমি লুক্কায়িত রহিলাম। আমায় আর দেখিতে না পাইয়া তাহারা ফিরিয়া গেল। যাইতে যাইতে একজন বলিল,— “ভূত কি কখন ধরা যায়? ভূত হওয়া। এতক্ষণ কোন কালে বাতাসের সহিত মিশিয়া গিয়াছে।” বেড়ার পার্শ্বে আমি বসিয়া হাঁপাইতেছিলাম; কিঞ্চিৎ সুস্থ হইয়া উঠিয়া বসিলাম। এদিক ওদিক চাহিয়া দেখিলাম যে, বেড়ার বাহিরে ছোট একটি তাঁবু রহিয়াছে। তাহার ভিতরে ও বাহিরে জন দুই পুরুষ ও ঘাগরা-পরা তিনজন স্ত্রীলোক রহিয়াছে। নিকটে চার পাঁচটি বালকবালিকা খেলা করিতেছে। একটু দূরে সম্মুখের পা-বাঁধা কটা টাটু ঘোড়া চরিতেছে। যাহাদিগকে বেদিয়া বা হা-ঘোরে কঞ্জড় বলে, আমি বুঝিলাম যে, ইহারা সেই জাতি। ইহাদের ঘর-দ্বার নাই। আজ এখানে, কাল সেখানে গিয়া ইহারা জীবনযাপন করে। ভিক্ষা করিয়া চরি করিয়া অথবা জরী বটি বেচিয়া ইহারা দিনপাত করে। ইহারা খোট্টা কথা বলে। বাজারে তুমি একশত টাকায়ও রামচন্দ্ৰি অথবা আকবরি মোহর পাইবে না। কিন্তু ইহাদের নিকট দুই তিন টাকায় পাওয়া যায়। সে মোহর পূজা ঘরে মা-লক্ষ্মী অচলা অটল বিরাজ করেন। স্ত্রীলোকেরা রন্ধন করিতেছিল। বেলুন্ঠদৈর্শটার সময়ে সকলে আহার করিয়া গ্ৰাম অভিমুখে চলিয়া গেল। ঘরে কেবল এক বুদ্ভিসেরহিল। বাহিরে বসিয়া বুড়ি আপনার মনে চুবড়ী বুনিতে লাগিল। যাইবার পূৰ্ব্বে এক তাহার কন্যার ছোট একটি সালুর ঘাঘরা শুষ্ক হইবার নিমিত্ত আমার নিকট ভেরাণ্ডাষ্টীছৈ ঝুলাইয়া দিল। সকলে চলিয়া গেলে সেই ঘাগরার দিকে আমার দৃষ্টি পড়িল। খুপ করিয়া ঘাগরাটি বেড়ার ভিতর টানিয়া লইলাম। ঘাগরাটি চুরি করিয়া আমি পরিধান করিলাম। আমার হাঁটু পৰ্যন্ত হইল। তাহার পর অন্যদিক দিয়া চুপে চুপে বেড়ার ভিতর হইতে বাহির হইয়া আমি পলায়ন করিলাম। আমার গ্রাম কোন দিকে, দিনের বেলা এখন অনেকটা বুঝিয়েছিলাম। হন হন করিয়া সেই দিকে চলিতে লাগিলাম। কিন্তু শরীর দুৰ্ব্বল, তাহার উপর। প্ৰহারের বেদনা; অধিক দ্রুতবেগে যাইতে পারিলাম না। লাল ঘাগরা পরিয়া আমাকে মন্দ দেখায় নাই। যাহার শ্ৰী আছে, সে যা পরিধান করুক না কেন, তাহাতেই তাকে ভাল দেখায়। যাহারা বঁােদর খেলায়, তাহাদের সহিত যেরূপ লাল ঘাগরা পরা একটা বীন্দরের মেম থাকে, আমাকেও সেইরূপ মোমের মত দেখাইল। আমার গায়ের রং একটু কালো, কেবল এই প্ৰভেদ। আমাকে ভাল দেখাইলে কি হয়, এরূপ মেম সাজিয়া পাঁচজনের সম্মুখে বাহির হইতে লজ্জা করে। সে জন্য আমি কোন গ্রামের ভিতর প্রবেশ করিলাম না। সেজন্য লোক দেখিলে তাহাদিগকে দূরে রাখিয়া আমি পথ চলিতে লাগিলাম। এই কারণে ক্ৰমে পৌছিতে আমার অনেক বিলম্ব হইল। বেলা প্ৰায় পাঁচটার সময় আমাদের গ্রামের নিকট মাঠে আসিয়া আমি উপস্থিত হইলাম। আমি ভাবিলাম, এ বেশে দিনের বেলা গ্রামের ভিতর প্রবেশ করিব না। পাঁচজনে দেখিলে হাসিবে। দুর্লভী বাগিন্দনীকে তোমরা সকলেই জান। মন্দ নয়— না? যাহার জন্য ও-বৎসর জন্ম-কৰিত দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com ~ br;