পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৮৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ ঈষৎ হাস্য করিয়া আমি বলিলাম,- “এলোকেশী! তুমি এখন যাহা করিলে, তাহাতে আমার অৰ্দ্ধেক রোগ ভাল হইয়া গেল। আর আমাকে কোনরূপ ঔষধ খাইতে হইবে না।” এলোকেশী সে কথা শুনিলেন না। পরদিন গোবৰ্দ্ধনপুরে তিনি ডাক্তার আনিতে পাঠাইলেন। ডাক্তার আসিয়া আমার নাড়ী দেখিলেন, জিহবা দেখিলেন, পেট টিপিয়া দেখিলেন। বুকের উপর বামহস্ত রাখিয়া দক্ষিণ হস্তের অঙ্গুলির ডগা দিয়া অনেক ঠোকাঠুকি করিলেন। তাহার পর আমার বুকে চোঙ বসাইলেন। চোঙের অন্যদিকে কান দিয়া তিনি বলিলেন,- “এখানে একটা প্যাচ আছে।” এইরূপ তিন-চারিটিা প্যাচের কথা তিনি বলিলেন। প্যাচ আছে শুনিয়া আমার মনে ভরসা হইল। আমি ভাবিলাম যে, আমার যখন এতগুলি প্যাচ আছে, তখন আমি মরিব না, বহুকাল আমি বঁচিব। ডাক্তার তাহার পর পুলটিস ও ঔষধের ব্যবস্থা করিলেন। খাইবার নিমিত্ত আমাকে সাবু দিতে বলিলেন। সাবুর নাম শুনিয়া আমার সাৰ্ব্বশরীর জুলিয়া উঠিল। আমি বলিলাম,- “কি । সাবুদােনা? বিলাতী জিনিষ। তাহা আমি কখনই খাইব না। চিরকাল আমি পরম নিষ্ঠাবান হিন্দু। অখাদ্য খাইয়া আমি অধৰ্ম্ম করিতে পারিব না। ডাক্তারবাবু! আপনি বোধ হয় জানেন না যে, কয়েক বৎসর পূৰ্ব্বে সন্ন্যাসী-বিভ্রাটে পড়িয়া আমার রীর যমের বাড়ী গিয়াছিল! যখন ভক্ষণ করি নাই। যম সেই কথা শুনিয়া প্ৰসন্নবদ্যুনেইর্ষ্যৈাৎফুল্ল লোচনে পুলকিত মনে বলিলেন,- “সাধু সাধু সাধু! এই মহাত্মা একাদশীর দিনগুইশাক ভক্ষণ করেন না। ইহার পদার্পণে আজ আমার যমপুরী পবিত্ৰ হইল। শীঘ্ৰ তোমরা যামনীকে শঙ্খ বাজাইতে বল। যমকন্যাগণকে পুষ্পবৃষ্টি করিতে বল। বিশ্বকৰ্ম্মকে ডাকিয়া আন। ভূঃ তুবঃ স্বঃ মহঃ জনঃতপঃ সত্যলোক পারে। ধ্রুবলোকের উপরে এই মহাত্মার জন্য মন্দাকিনী-কলকলিত, পারিজাতপরিশোভিত, কোকিলকুহরিত, ভ্রমর-গুঞ্জরিত, অন্সরা-পদ-নূপুর-কুণ্ডুনিত, হীরা-মাণিক-খচিত, নৃতন এক স্বৰ্গ নিৰ্ম্মাণ করিতে বল।” শুনিলেন ডাক্তারবাবু! খাদ্যাখাদ্যের বিচার করিলে কত ফল হয়? আমি আশ্চৰ্য হই যে, টিকিনাড়ারা এখানে-ওখানে যায় কেন, ধৰ্ম্মকথা শিখিতে আমার কাছে আসে না কেন?” আমি পুনরায় বলিলাম,- “ডাক্তারবাবু! কেন আমি তোমার ও জগদ্দল পাথর মসূনের পুলটিস চাপাইব না, তোমার ঔষধও আমি খাইব না। কেবল আমি মা দুৰ্গাকে ডাকিব, আর আমাদের কাটিগঙ্গার জল খাইব । আমাদের কাটিগঙ্গার জল মকরধ্বজের বাবা।” আমি কাহারও কথা শুনিলাম না। সেই দিন হইতে আমি কেবল কাটিগঙ্গার জল খাইতে লাগিলাম। সেই রাত্ৰিতে মা দুৰ্গা শিয়রে বসিয়া আমার মাথায় হাত বুলাইতে বুলাইতে বলিলেন,- “ডমরুধর! বাছা! তুমি আমার বরপুত্র। কেন তুমি বলিয়াছিলে যে, আর আমার পূজা করিবে না? সেইজন্য তোমাকে এই রোগ দিয়াছি। কিন্তু ভয় নাই, তোমাকে আমি রোগ হইতে মুক্ত করিলাম। তাহার পর আরও একটু নূতন বুদ্ধি তোমাকে আমি দিলাম। এই বুদ্ধিটুকু তুমি খেলাইবে । তাহা হইলে হীরাখণ্ড হাতছাড়া হইয়া তোমার যে ক্ষতি হইয়াছে, তাহার দশগুণ তোমার লাভ হইবে। কিন্তু বাছা, তোমার পূজায় আমি যে তৃপ্তিলাভ করি, বঙ্গদেশে কাহারও পূজায় সেরূপ তৃপ্তিলাভ করি না।” ডম্বক্ষ-চৰিত দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com ~