পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আঘাতে দেহ হইতে মুণ্ড বিচ্ছিন্ন হইয়া যায়। জীবিত থাকিতে ছিলাম একজন মনুষ্য; মরিয়া হইলাম দুইজন ভুত। মুণ্ডটি হইলাম আমি স্কল, আর ধড়টি হইলেন ইনি স্কেলিটন ভায়া। ৯৯৯ বৎসর পূর্ব্বে আমরা এই ধনের যক দিয়াছি। আর একবৎসর গত হইলেই সহস্ৰ বৎসর পূর্ণ হয়। তখন নাকেশ্বরী এ ধন ছাড়িয়া দিবে। গত পৌষ মাসে নাকেশ্বরীর সহিত ঘ্যাঁঘোঁ নামক ভূতের শুভবিবাহ হইয়াছে। নাকেশ্বরী আপনার শ্বশুরালয়ে চলিয়া যাইবে। তখন এ ধন লইলে আর তোমার কোনও বিপদ ঘটিবে না! কিন্তু এই একবৎসরের ভিতর কোনও মতে এ ধনের কণামাত্র স্পর্শ করিবে না, করিলেই অবিলম্বে নাকেশ্বরী তোমাকে খাইয়া ফেলিবে, অবিলম্বে তোমার মৃত্যু ঘটিবে। এই ধনসম্পত্তির প্রকৃত স্বামী আমরা দুইজন। এই ধন আমরা তোমাকে প্রদান করিলাম। কিন্তু সাবধান, এই একবৎসরের ভিতর এ ধন স্পর্শ করিবে না।”

 আমি উত্তর করিলাম,— “মহাশয়! আপনাদের কৃপায় আমি অতিশয় অনুগৃহীত হইলাম। যদি আমাকে এ সম্পত্তি দিলেন, তবে এরূপ কোন একটা উপায় করুন, যাহাতে এ ধন হইতে এখন আমি কিছু লইতে পারি। সম্প্রতি আমার অর্থের নিতান্ত প্রয়োজন। এখন যদি পাই, তবে আমার বিশেষ উপকার হয়, এমন কি, আমার প্রাণরক্ষা হয়! এখন না পাইলে, একবৎসর পরে জীবিত থাকি কি তাই সন্দেহ।”

 এই কথা শুনিয়া অনেকক্ষণ ধরিয়া, স্কল ও স্কেলিটন পরামর্শ করিতে লাগিলেন। তাহারা কি বলাবলি করিলেন, আমি তাহা বুঝিতে পারিলাম না! স্কল বলিলেন,— “এস, আমাদের সঙ্গে পুনরায় বাহিরে এস।” সকলে পুনরায় যাইলাম, বনের ভিতর পুনরায় আমরা ভ্রমণ করিতে লাগিলাম। স্কল বন খুঁজিতে লাগিলেন। অবশেষে সামান্য একটি ওষধির গাছ দেখাইয়া তিনি আমাকে বলিলেন,— “এই গাছটির তুমি মূল উত্তোলন কর!” আমি সেই গাছটির শিকড় তুলিলাম। স্কলের আদেশে অপর একটি গাছের আঠা দিয়া সেই শিকড় পর সকলে পুনরায় আবার এই অট্টালিকায় ফিরিয়া আসিলাম।

 এইখানে উপস্থিত হইয়া স্কল বলিলেন,— “যে-সকল কথা তোমাকে আমি এখন বলি, অতি মনোযোগের সহিত শুন। আপাততঃ যথাপ্রয়োজন টাকা লইয়া তুমি তোমার কার্য্য সমাধা করিবে। যে শিকড় তোমাকে আমরা দিলাম, তাহার গুণ এই যে, ইহা মাথায় থাকিলে, যতক্ষণ তুমি অট্টালিকার ভিতর থাকিবে, ততক্ষণ নাকেশ্বরী তোমার প্রাণবধ করিতে পরিবে না। অট্টালিকার বাহিরে শিকড় তোমাকে রক্ষা করিতে পরিবে না। শিকড়ের কিন্তু আর একটি গুণ এই যে, ইহা মাথায় থাকিলে যে জন্তুর আকার ধরিতে ইচ্ছা করিবে, তৎক্ষণাৎ সেই জন্তু হইতে পরিবে। ব্যাঘ্র হইতেছেন নাকেশ্বরীর ইষ্টদেবতা। সেজন্য যখন তুমি অট্টালিকার বাহিরে যাইবে, তখন ব্যাঘ্ররূপ ধরিয়া যাইবে। তাহা হইলে নাকেশ্বরী তোমাকে কিছু বলিতে পারিবে না। তাহার পর অট্টালিকার ভিতর প্রত্যাগমন করিয়া ইচ্ছা করিলেই মানুষ্যের মূর্ত্তি ধরিতে পরিবে। অতএব দুইটি কথা স্মরণ রাখিও, কোনও মতেই ভুলিবে না। প্রথম, এ একবৎসর শিকড়টি যেন কিছুতেই তোমার মাথা হইতে না যায়, যাইলেই মৃত্যু। তুমি যেখানে থাক না কেন, সেইখানেই মৃত্যু। দ্বিতীয়, ব্যাঘরূপ না ধরিয়া বাহিরে যাইবে না, এক মুহূর্ত্তকালের নিমিত্তও নিজরূপে বাহিরে থাকিবে না, থাকিলেই মৃত্যু, সেই দণ্ডেই মৃত্যু। একবৎসর পরে শিকড়টি দগ্ধ করিয়া সমুদয় ধনসম্পত্তি লইয়া দেশে চলিয়া যাইবে। এ একবৎসরের ভিতর যদি তুমি ধন না লইতে, তাহা হইলে এসব কিছুই করিতে হইত না। কারণ নাকেশ্বরী-রক্ষিত ধন

৮২
ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ