পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 কঙ্কাবতী বলিলেন,— “তবে আমিও যাই, গিয়া নাকেশ্বরীর টাকা লই, তাহা হইলে আমাদের দুইজনকে সে একসঙ্গে মারিয়া ফেলিবে। পতিপরায়ণা সতীর ইহার চেয়ে আর সৌভাগ্য কি?”

 এই কথা বলিয়া কঙ্কাবতী উঠিবার উপক্রম করিতেছেন, এমন সময়ে এক অতি ভয়াবহ চীৎকারে সে স্থান পরিপূরিত হইল। অট্টালিকা কাঁপিতে লাগিল। দ্বার গবাক্ষ পরস্পরে আঘাতিত হইয়া ঝন-ঝন করিয়া শব্দ হইতে লাগিল। অট্টালিকা ঘোর অন্ধকারে আচ্ছাদিত হইল। প্রজ্বলিত বাতিটি নির্ব্বাণ হইল না বটে, কিন্তু অন্ধকারে আবৃত হইয়া গেল।

 খেতু বলিলেন,— “কঙ্কাবতী! ঐ নাকেশ্বরী আসিতেছে।”

 কঙ্কাবতী এতক্ষণ শয্যার ধারে বসিয়াছিলেন। এখন তাড়াতাড়ি উঠিয়া ঘরের দ্বারটি উত্তমরূপে বন্ধ করিয়া দিলেন, আর দ্বারের উপর সমুদয় শরীরের বলের সহিত ঠেশ দিয়া দাঁড়াইলেন। নাকেশ্বরীকে তিনি ভিতরে আসিতে দিবেন না!

 অতি দুর্গন্ধে, নিবিড় অন্ধকারে, ঘন ঘন ঘোর গভীর শব্দে, ঘর পরিপূরিত হইল।

 ক্রমে শব্দ থামিল, অন্ধকার দূর হইল, বাতির আলোকে পুনরায় ঘর আলোকিত হইল। তখন কঙ্কাবতী দেখিতে পাইলেন যে, মৃতপ্রায় অচেতন হইয়া চক্ষু মুদ্রিত করিয়া, খেতু বিছানায় পড়িয়া আছেন। ভীমরূপা নাকেশ্বরী পার্শ্বে দণ্ডায়মানা, কঙ্কাবতী দৌড়িয়া গিয়া নাকেশ্বরীর পায়ে পড়িলেন।

কঙ্কাবতী
৮৫