পাতা:দর্পচূর্ণ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তা হলে বল সমস্ত জেনে-শুিনেই বাবা আমাকে জলে ফেলে। দিয়েছেন । অসহ্যু ব্যথায় ও বিস্ময়ে নরেন্দ্ৰ স্তম্ভিত হইয়া চাহিয়া থাকিয়া শির নিত করিল। স্ত্রীর এই ক্ৰোধ যথার্থই সত্য কিংবা কলহের ছলনা। মাত্র, হঠাৎ সে যেন ঠাহর করিতে পারিল না । এখানে গোড়ার কথা একটু বলা আবশ্যক। এক সময়ে বহুকাল উভয় পরিবার পাশাপাশি বাস করিয়াছিলেন এবং বিবাহটী সেই সময়েই একরূপ স্থির হইয়াছিল। কিন্তু হঠাৎ এক সমযে ইন্দুর পিতা নিজের মত-পরিবর্তন করিয়া, মেয়েকে একটি অধিক বয়স পর্যন্ত অবিবাহিত রাখিয়া লেখাপড়া শিখাইতে মনস্থ করায় বিবাহ-সম্বন্ধও ভাঙ্গিয়া যায়। কয়েক বর্ষ পরে ইন্দুর আঠারো বৎসর বয়সে আবার যখন কথা উঠে, তখন কলিকাতায় ফিরিয়া শুনেন নরেন্দ্ৰেব পিতার মৃত্যু হইয়াছে। সে সময় তাহার সাংসারিক অবস্থা ইন্দুর পিতা-মাতা যথেষ্ট পৰ্য্যালোচনা করিয়াছিলেন, এমন কি, তাহাদের মত পৰ্য্যন্ত ছিল না ; শুধু বয়স্থা শিক্ষিতা কন্যার প্রবল অনুরাগ উপেক্ষা করিতে না পাবিয়াই অবশেষে তাহারা সম্মত হইয়াছিলেন । এত কথা এত শত্র ইন্দু যথার্থই ভুলিয়াছে কিংবা মিথ্যা মোহে অন্ধ হইয়া নিজেকে প্ৰতারিত করিবার নিদারুণ আত্মগ্লানি এখন এমন করিয়া তাহাকে অহরহ জ্বালাইয়া তুলিতেছে, কিছুই স্থির করিতে না পারিয়া, নরেন্দ্ৰ স্তব্ধ-নিরুত্তরে মাথা হেঁট করিয়া রহিল। সেই নিববৰ্ণােক স্বামীর আনত মুখের প্রতি ক্ষণকাল দৃষ্টিপাত করিয়া ইন্দু আর কোন কথা না বলিয়া ঘর ছাড়িয়া চলিয়া গেল। সে নি:শব্দে গেল বটে-এমন অনেকদিন গিয়াছে ; কিন্তু আজ অকস্মাৎ নরেন্দ্রর মনে হইল, তাহার বুকে বড় বেদনার স্থানটা ইন্দু যেন ইচ্ছাপূর্বক জোর করিয়া মাড়াইয়া দিয়া বাহির হইয়া গেল ! একবার ঈষৎ একটু ঘাড় তুলিয়। স্ত্রীর নিষ্ঠুর পদক্ষেপ চাহিয়া দেখিল ; যখন আর দেখা গেল না, তখন গভীর-অতি গভীর একটা নিশ্বাস ফেলিয়া নিজীবের মত