পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পুরাণো বিধানকে চালু রাখা যাবে না। এবং সেই জন্যে কানাডা ও দক্ষিণআফ্রিকায় তারা যেমন করেছিল, তেমনই প্রকৃত রাজনীতিবিদের মতো কাজ করবে। এখন বুঝতে পেরেছি, গবর্নমেণ্টের হৃদয় বলে কোন পদার্থ থাকে না; এবং যেখানে হৃদয়ই নেই সেখানে হৃদয়ের পরিবর্তনও সম্ভব নয়। আমরা আরও বুঝেছি যে, অশ্বেত জাতির প্রতি বৃটেনের যে নীতি তার সঙ্গে শ্বেত জাতির প্রতি তার অনুসৃত নীতির বিভিন্নতা আছে। তা ছাড়া বৃটিশরা অনুভব করে, ভারত যদি সাম্রাজ্যের বাইরে চলে যায়, তবে সঙ্গে সঙ্গে সাম্রাজ্যের ভিত্তিও ধ্বসে যাবে; সাম্রাজ্যের অস্তিত্বই থাকবে না। এমন কি ডোমিনিয়ন ষ্ট্যাটাস দিলেও ভারত শেষ পর্য্যন্ত সাম্রাজ্যের বাইরে চলে যাবে। কানাডা ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ভারতকে সাম্রাজ্যের মধ্যে বেঁধে রাখার জোর নেই; একবার ডোমিনিয়ন ষ্ট্যাটাস পেলেই ভারত সাম্রাজ্যের বাইরে চলে যাবার চেষ্টা করবেই। এ প্রসঙ্গে আয়ার্ল্যাণ্ডের সাম্প্রতিক ইতিহাস বৃটিশ মনোভাব ও মনোবৃত্তির উপর সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে—ভারতের অনেকেই এখনও তা অনুধাবন করেন নি। সর্ব্বদলীয় বৃটিশ রাজনীতিবিদরা যখন ১৯২১-এ ইঙ্গ-আইরিশ সন্ধি সমর্থন করেছিলেন, তখন তাঁরা ভেবেছিলেন, চিরদিনের মতো আইরিশ সমস্যা মিটে গেল। কিন্তু ১৯৩২ অব্দে প্রেসিডেণ্ট ডি-ভ্যালেরা যখন আইরিশ রাজনীতিক্ষেত্রে আবির্ভূত হলেন, তখন আইরিশ সমস্যারও পুনরাবির্ভাব হল এবং নতুন করে সাধারণতন্ত্রের দাবি উঠল। প্রেসিডেণ্ট ডি-ভ্যালেরার ক্ষমতা-প্রাপ্তির পর থেকে বৃটিশরা তাঁকে ক্ষমতাহীন ও শক্তিচ্যুত করবার জন্যে প্রাণপণ প্রয়াস পেয়েছে, কিন্তু তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ডোমিনিয় গবর্নমেণ্টের শক্তি ও সামর্থ্য নিয়ে প্রেসিডেণ্ট ডি-ভ্যালেরা এ পর্য্যন্ত বৃটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছেন এবং ১৯১৬-২১ পর্য্যন্ত বিপ্লবী হিসেবে তিনি যে যুদ্ধ করেছিলেন, তার চেয়ে এ যুদ্ধ হয়েছে বেশী কার্য্যকর। বৃটিশরা তাই

৯৬