পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ভারতের মধ্যেই যদি আধুনিক বাহিনী গঠন এবং ভারতের মধ্য থেকেই সে বাহিনীর জন্যে অস্ত্রশস্ত্রাদি সংগ্রহ সম্ভব হত, তবে বাইরে থেকে কোন সাহায্যের প্রয়োজন হত না এবং ভারতীয় জনগণের পক্ষে তাই হত প্রকৃষ্টতম ব্যবস্থা। কিন্তু ১৮৫৭ অব্দের পরে ভারতীয় জনগণকে যেভাবে নিরস্ত্র করা হয়েছে—তাতে ভারতের মধ্যে কোন বৈপ্লবিক বাহিনী সংগঠন কিংবা তার জন্যে অস্ত্রাদি সংগ্রহ করা অসম্ভব। এর জন্যে হতাশ হয়ে সংগ্রাম পরিত্যাগ করার কোন কারণ নেই। রোগ যত কঠিনই হোক, তার প্রতিষেধক আছে। প্রত্যেক সমস্যারই সমাধান আছে—শুধু আমাদের আবিষ্কারেয় প্রতীক্ষা। এক্ষেত্রে প্রতিষেধক হচ্ছে ভারতের বাইরে বাহিনী সংগঠন, সেই বাহিনীর জন্যে অস্ত্রাদি সংগ্রহ করা এবং তারপর দেশের বুকে অভিযান চালানো। পূর্ব্ব-এশিয়ার ভারতীয়রা বর্ত্তমানে তা-ই করছে।

 পূর্ব্ব-এশিয়ার ভারতীয়রা যা করছে, ইতিহাসে তার নজির আছে। গত যুদ্ধে আইরিশ সিনফিনদলের বিপ্লবীরা মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অর্থ এবং অস্ত্র সাহায্য পেয়েছিল; তা ছাড়া জার্ম্মাণীর কাছ থেকেও অস্ত্রাদি পেয়েছিল। ১৮৫৯ অব্দে ইটালীর স্বাধীনতা-সংগ্রামে ইটালীদখলকারী অষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে তৃতীয় নেপোলিয়ঁর ফরাসী-বাহিনী আহূত হয়েছিল। তুরস্কের শাসন-মুক্তির জন্যে বল্কান যুদ্ধে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সাহায্যে বুলগেরিয়া মুক্তি পেয়েছিল। বস্তুতঃ পৃথিবীর বিপ্লবের ইতিহাসে এমন কোন উদাহরণ নেই, যে ক্ষেত্রে কোন না কোন প্রকারে বাইরের সাহায্য ছাড়া স্বাধীনতা অর্জ্জন সম্ভব হয়েছে।

 আমি উপরে মন্তব্য করেছি যে, অহিংস সংগ্রামের দ্বারা ভারতের স্বাধীনতা অর্জ্জন কখনও সম্ভব হবে না। যদি সেই অলৌকিক ব্যাপার সম্ভবই হয় এবং শুধু সত্যাগ্রহের দ্বারা আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি, তবে

৯৮