পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যুদ্ধ-ঘোষণা করে, তখন জার্ম্মান সেনাদের কণ্ঠে শুধু এই একটা ধ্বনি ছিল—প্যারিস চলো, প্যারিস চলো! ১৯৪১-এ অভিযান আরম্ভ করার সময় জাপানি সেনাদের মুখেও ছিল একই কথা—সিঙ্গাপুর চলো, সিঙ্গাপুর চলো!

 হে আমার সতীর্থগণ, সেনাদল, তোমাদেরও রণধ্বনি হোক—দিল্লী চলো, দিল্লী চলো! স্বাধীনতা-সংগ্রামের মধ্যে আমরা কে কতদিন বেঁচে থাকব জানি না; তবে একথা আমি নিশ্চয় জানি, চরম জয়লাভ আমরা করবই, এবং প্রাচীন দিল্লীর লাল-কেল্লায় বিজয়োৎসব সম্পন্ন না করা পর্য্যন্ত আমাদের কর্ত্তব্য শেষ হবে না।

 দেশসেবার সাধনায় আত্মনিয়োগ করার পর সব সময় আমার মনে হয়েছে, অন্য সব বিষয়েই ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভের উপযুক্ত হলেও একটি বিষয়ে তার অভাব আছে—তার স্বাধীনতা-প্রয়াসী সেনাদল নেই। সেনাদল ছিল বলেই আমেরিকার জর্জ্জ ওয়াশিংটন সংগ্রামের দ্বারা স্বাধীনতা অর্জ্জন করতে পেরেছিলেন। গ্যারিবল্ডীর পিছনেও সশস্ত্র স্বেচ্ছাসেবক-বাহিনী ছিল বলে তিনি ইটালীকে স্বাধীন করতে পেরেছিলেন। তোমাদের সৌভাগ্য এই, তোমরা ভারতীয় জাতীয় বাহিনী গঠনের অগ্রণী হবার সুযোগ এবং সম্মান পেয়েছ। এই ভাবে তোমরা আমাদের স্বাধীনতা-লাভের পথে শেষ বাধাকে অপসারিত করেছ। এমন মহৎ ব্রতের পুরোভাগে তোমরা, অগ্রদূত তোমরা—এ জন্যে সুখী হও, গর্ব্ববোধ কর।

 আমি তোমাদের কর্ত্তব্য স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি,—সে কর্ত্তব্য দ্বিবিধ। অস্ত্রবলের দ্বারা এবং নিজেদের শোণিতোৎসর্গ করে ভারতের স্বাধীনতা অর্জ্জন করতে হবে। তারপর ভারত যখন স্বাধীন হবে, তখন স্বাধীন ভারতের জন্যে স্থায়ী সেনাবাহিনী গড়ে তুলবে তোমরাই। তখন কর্ত্তব্য হবে ভারতের স্বাধীনতা রক্ষা করা। তোমরা আমাদের দেশরক্ষার