পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চালিয়ে যেতে নতুন করে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ভারতের প্রথম মুক্তি সংগ্রামের প্রধান সেনাপতি যে স্থানে তাঁর দেহ রক্ষা করেছিলেন, সেই স্থানই আজ ভারতের শেষ মুক্তিযুদ্ধের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে—এর মধ্যেও আমি দৈবের অঙ্গুলিনির্দ্দেশ দেখতে পাচ্ছি। এই পবিত্র স্থান থেকে আমাদের সৈন্যরা আজ মাতৃভূমির দিকে এগিয়ে চলেছে। আজাদ-হিন্দ ফৌজের আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ উপলক্ষে তাই আমরা এখানেই পুনর্মিলিত হয়েছি—সেই মহান দেশপ্রেমিক ও নেতার উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে, আমাদের গত বৎসরের প্রতিশ্রুতির আংশিক পরিপূরণে আনন্দ প্রকাশ করতে এবং অবাঞ্ছিত বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে পূণ্যভূমি ভারতবর্ষকে মুক্ত না করতে পারা পর্য্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবার সঙ্কল্প পুনর্গ্রহণ করতে।

 ১৮৫৭ অব্দের ঘটনাবলী সম্বন্ধে কিছু বলা আমার কর্ত্তব্য। ইংরেজ ঐতিহাসিকরা প্রচার করেছেন, ১৮৫৭ অব্দের যুদ্ধ বৃটিশের অধীনস্থ ভারতীয় সিপাহীদের বিদ্রোহ ছাড়া আর কিছু নয়। এ বিবরণ সত্য নয়। বস্তুতঃ ১৮৫৭ অব্দের বিপ্লব জাতীয় বিপ্লব; তাতে ভারতীয় সৈন্যরা এবং অসামরিক অধিবাসীরা অংশ গ্রহণ করেছিল। ভারতের দেশীয় নৃপতিদের মধ্যে অনেকে সেই দেশব্যাপী বিপ্লবে যোগ দিয়েছিলেন—যদিও দুর্ভাগ্যবশতঃ তাঁদের কেউ কেউ এর থেকে দূরে সরে দাঁড়িয়েছিলেনও। সেই যুদ্ধের প্রথম অবস্থায় আমরা বিজয়ের পর বিজয় লাভ করেছিলাম; শুধু শেষের দিকেই আমরা শক্তিহীন হয়ে পরাজিত হয়েছিলাম। বিপ্লবের ইতিহাসে এটা কিছু অস্বাভাবিক নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন বিপ্লবের উদাহরণ খুব কমই দেখা যায়, যেক্ষেত্রে প্রথম সংগ্রামেই সাফল্য লাভ হয়েছে। “স্বাধীনতার যুদ্ধ একবার সুরু হলে সব সময় পিতার থেকে পুত্রের হাতে তার উত্তরাধিকার চলে আসে।” বিপ্লব সাময়িকভাবে ব্যর্থ ও দমিত হলেও পশ্চাতে সে তার শিক্ষা রেখে যায়।

১০৭