পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পরবর্ত্তী যুগের লোকেরা সেই সব শিক্ষা লাভ করে এবং উন্নততর আয়োজন করে আরও কার্য্যকরী উপায়ে নূতনভাবে সংগ্রাম আরম্ভ করে। আমরা ১৮৫৭ অব্দের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা লাভ করেছি, এবং সেই অভিজ্ঞতার আলোকে এই সংগ্রামের জন্যে প্রস্তুত হয়েছি। এই সংগ্রামই ভারতের শেষ স্বাধীনতা-সংগ্রাম।

 ১৮৫৭ অব্দে ভারতীয় জনগণ হঠাৎ একদিন বৃটিশের বিরুদ্ধে অস্ত্র গ্রহণ করল—এমন কথা মনে করলে ভুল করা হবে। এমন আকস্মিক রূপে কোন বিপ্লবই অনুষ্ঠিত হয় না। ১৮৫৭ অব্দে আমাদের নেতারা যুদ্ধের জন্যে সর্ব্বপ্রকার আয়োজন করার প্রাণপণ প্রয়াস পেয়েছিলেন— যদিও পরে দেখা গেল, তাঁদের সে আয়োজন যথেষ্ট ছিল না। উদাহরণস্বরূপ ধরুন, নানা সাহেবের কথা—যিনি সেই যুদ্ধের অন্যতম প্রধান নায়ক। তিনি বিদেশ থেকে সাহায্য ও সহযোগিতা পাবার আশায় সারা ইউরোপে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয়, তার সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। ১৮৫৭ অব্দে যখন বিপ্লব আরম্ভ হল, তখন বৃটেনের সঙ্গে পৃথিবীর অন্যান্য সব দেশের মৈত্রী-সম্পর্ক ছিল এবং বিপ্লবীদের শায়েস্তা করার জন্যে বৃটিশ সমস্ত শক্তি-সামর্থ্য নিয়োগ করতে পেরেছিল।

 ভারতের অভ্যন্তরে জনগণ ও সৈন্যদের মধ্যে কিছুকাল বিচক্ষণতা ও কৌশলের সঙ্গে প্রচারকার্য্য চালানো হয়েছিল। ফলে, বিপ্লবের ইঙ্গিত দেওয়া মাত্রই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একই সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হল। বিজয়ের পর বিজয় লাভ করা হল। উত্তর-ভারতের উল্লেখযোগ্য সব সহর বৃটিশদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হল এবং বিপ্লবী সৈন্যদল সগৌরবে ভারতের রাজধানীতে প্রবেশ করল। অভিযানের প্রথম পর্য্যায়ে বিপ্লবীরা প্রায় সর্ব্বত্রই বিজয় লাভ করল। অভিযানের দ্বিতীয় পর্য্যায়ে বৃটিশ যখন প্রত্যাক্রমণ সুরু করল, তখন আমাদের লোকেরা আত্মরক্ষা করতে পারল না। তখন বিপ্লবীদের দেশব্যাপী সমর-কৌশল দেখা গেল;

১০৮