কিন্তু সে সমর কৌশলের সমন্বয়-সাধনের জন্যে তেজস্বী নেতার অভাব হল। তা ছাড়া, কোন কোন অঞ্চলে দেশীয় নৃপতিরা নিষ্ক্রিয় এবং উদাসীন হয়ে রইলেন। এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বাহাদুর শাহ্ জয়পুর, যোধপুর, বিকানীর, আলোয়ার প্রভৃতি রাজ্যের রাজাদের কাছে নিম্ন লিখিতরূপ পত্র লিখেছিলেন:—
“সর্ব্বপ্রকারে এবং যে কোন মূল্যে ইংরেজদের হিন্দুস্থান থেকে বিতাড়িত হতে দেখাই আমার একাগ্র ইচ্ছা। আমার একান্ত ইচ্ছা, সমগ্র হিন্দুস্থান যেন স্বাধীন হয়। এই উদ্দেশ্যে যে বিপ্লব আরম্ভ হয়েছে তা সাফল্যমণ্ডিত হতে পারে না—যদি এমন কোন লোক এসে না দাঁড়ান যিনি জাতির বিভিন্ন শত্তিকে সঙ্ঘবদ্ধ ও সংহত করতে পারেন, সমস্ত আন্দোলনের ঝুঁকি নিজের কাঁধে তুলে নিতে পারেন এবং সমগ্র জনসমাজকে নিজের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ করে এই আন্দোলনকে চালিয়ে নিতে পারেন। ইংরেজ-বিতাড়নের পর নিজ লাভের জন্যে ভারত-শাসনের কোন ইচ্ছাই আমার মনে নেই। আপনারা সমস্ত রাজা যদি স্বাধীনতার জন্যে অসি কোষমুক্ত করতে প্রস্তুত থাকেন, তবে আমি সম্রাটের ক্ষমতা ত্যাগ করে নির্ব্বাচিত ভারতীয় রাজাদের একটি সঙ্ঘের হাতে শাসন-শক্তি ন্যস্ত করতে সম্মত আছি।”
বাহাদুর শাহের নিজহাতে লেখা এই চিঠির মধ্যে যে দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের প্রকাশ পেয়েছে তার সামনে স্বাধীনতাকামী ভারতীয় মাত্রেরই শ্রদ্ধায় মাথা নুইয়ে আসে।
বৃদ্ধ এবং দুর্ব্বল বাহাদুর শাহ্ অনুভব করেছিলেন, নিজে যুদ্ধ পরিচালনা করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব। কাজেই তিনি সমগ্র অভিযান পরিচালনার জন্যে ছয় জনের একটি কমিটি গঠন করেছিলেন। এই কমিটিতে ছিলেন তিনজন সেনাপতি এবং তিনজন অসামরিক ব্যক্তি।
১০৯