পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জানে যে আজাদ-হিন্দ ফৌজের সৈন্যরা আজ ভারতের মাটিতে যুদ্ধ করছে। মিত্রপক্ষ আজ আমাদের বিরুদ্ধে একমাত্র সমালোচনা যা করতে পারে সে হচ্ছে এই যে আমরা এখন পর্য্যন্ত দিল্লীতে পৌঁছুতে পারি নি। আমি মণিপুর থেকে ভারতের রাজধানীর প্রকৃত দূরত্ব জানি; ভারতীয় অভিযানের জন্যে তাই আমি মোটামুটি দুবৎসর সময় ঠিক করে রেখেছি। ভাগ্য প্রসন্ন হলে, এ অভিযান তার পূর্ব্বেও সমাপ্ত হতে পারে—কিন্তু লাট-প্রাসাদের উপর আমাদের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্যে আমরা অন্ততঃ দু-বৎসর ধরে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত আছি। বছর খানেক ধরে আমি বলে আসছি, আমাদের পক্ষে ভারত-সীমান্ত অতিক্রম করা সহজতম কাজ। কিন্তু আমরা একবার ভারতে প্রবেশ করলেই প্রকৃত যুদ্ধ শুরু হবে। ভারতের মুক্তিযুদ্ধ মানেই বৃটিশ সাম্রাজ্য ধ্বংসের যুদ্ধ। অতএব এটা খুবই স্বাভাবিক যে, এ যুদ্ধে অন্ততঃ একবারের জন্যও বৃটিশরা প্রাণপণ সংগ্রাম করবে। কিন্তু বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের মৃত্যু পরোয়ানা সই হয়ে গেছে—শুধু দণ্ডাদেশ কার্য্যে পরিণত করাই বাকী। অবস্থা যখন খারাপ হয়ে দাঁড়ায়, তখন বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে মন নিয়ে যাবার জন্যে বৃটিশ প্রচারকরা স্বভাবতঃই চেষ্টা করে। নিজেদের পরাজয় ঢেকে রাখবার জন্যে তারা তখন অন্য কোন রণাঙ্গনে আমেরিকান কিংবা রুশদের সাফল্যের কথা জোরগলায় প্রচার করে। তাও সম্ভব না হলে তারা তখন কোন মজার গল্প বের করে সাধারণের দৃষ্টি দূরে সরিয়ে নিতে চায়। ভারতের পূর্ব্ব-রণাঙ্গনে বৃটিশদের অবস্থা যখন খারাপ যাচ্ছিল, তখন তারা ভারত-বিরোধী রেডিওর মারফৎ এই মর্ম্মে এক গল্প প্রচার করেছিল যে, আমাদের প্রেরিত বারো জন লোক তাদের দিকে যোগ দিয়েছে; তারা তাদের ছয় জনকে দিল্লী থেকে জাপবিরোধী প্রচারকার্য্য করতে বাধ্য করেছিল। তারা ভেবেছিল, এই ভাবে তারা ভারতীয় জনগণের মনে এই ধারণার সৃষ্টি করবে যে, এই লোকগুলি

১২০