পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তিন অস্ত্রের সন্ধানে ফিরছিল। এই সঙ্কটজনক মুহূর্ত্তে মহাত্মা গান্ধী তাঁর অসহযোগ, সত্যাগ্রহ, অথবা আইন-অমান্য আন্দোলনের অভিনব পদ্ধতি নিয়ে স্বাধীনতা-সংগ্রামে অবতীর্ণ হলেন। মনে হল স্বাধীনতার পথ-প্রদর্শনের জন্যে স্বয়ং ঈশ্বর যেন তাঁকে পাঠিয়ে দিলেন। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সমগ্র জাতি তাঁর পতাকাতলে সমবেত হল। সংগ্রামের নূতন পথ পেয়ে ভারতবাসী যেন বেঁচে গেল। প্রত্যেকের মুখমণ্ডল আশা ও বিশ্বাসের আলোকে প্রদীপ্ত হয়ে উঠল। আবার মনে হল, ভারতের জয় সুনিশ্চিত।

 কুড়ি বছর অথবা তার চেয়েও অধিককাল যাবৎ মহাত্মা গান্ধী এবং তাঁর সঙ্গে ভারতীয় জনগণও ভারতের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন। ১৯২০ অব্দে তিনি স্বাধীনতা-সংগ্রামের নূতন অস্ত্র নিয়ে যদি আবির্ভূত না হতেন, তা হলে ভারতকে আজও হয়তো অবসাদগ্রস্তহয়েই থাকতে হ’ত। একথার মধ্যে একটুও অতিরঞ্জন নেই। ভারতের স্বাধীনতা-সংগ্রামে তাঁর অবদান অপূর্ব্ব, অতুলনীয়। কোন একক ব্যক্তি এই রকম অবস্থায় এর চেয়ে বেশী কিছু কখনো করতে পারতেন না।

 ১৯২০ অব্দ থেকে ভারতীয় জনগণ মহাত্মা গান্ধীর কাছ থেকে দুটি জিনিষ শিক্ষা করেছে, যা স্বাধীনতা-অর্জ্জনের সংগ্রামে অপরিহার্য্য। সর্ব্বপ্রথমে তারা জাতীয় সম্মানবোধ ও আত্মপ্রত্যয় শিক্ষা করেছে, যার ফলে তাদের হৃদয়ে এখন বিপ্লবের অনুপ্রেরণা উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছে; দ্বিতীয়ত তারা দেশব্যাপী এমন একটা প্রতিষ্ঠান লাভ করেছে, যার প্রভাব ভারতের দূরতম পল্লীতেও গিয়ে পৌঁছেছে। স্বাধীনতার বাণী সমস্ত ভারতবাসীর হৃদয়ে প্রবেশ করায় সমগ্র জাতির প্রতিনিধিস্থানীয় একটা রাজনীতিক প্রতিষ্ঠান তারা পেয়েছে। আজ চরম মুক্তি-সংগ্রামের—স্বাধীনতার জন্য শেষ যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত।

 আধ্যাত্মিক জাগরণের ফলে কেবল যে ভারতেই স্বাধীনতা-সংগ্রাম

১৭