পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ও পাশবিকতার রাজত্ব সৃষ্টি করে। এর পর কিছুকাল ভারতবাসীরা হতমান এবং হতবাক হয়ে ছিল। ১৮৮৫ অব্দে কংগ্রেসের জন্মের পর ভারতের নবজাগরণ শুরু হল। ১৮৮৫ অব্দ থেকে প্রথম মহাযুদ্ধ পর্য্যন্ত ভারতীয় জনগণ তাদের হৃত স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন, প্রচার কার্য্য, বৃটিশ-দ্রব্য বর্জ্জন, সন্ত্রাসবাদ, ধ্বংসাত্মক আন্দোলন প্রভৃতি সকল উপায়—এবং অবশেষে সশস্ত্র বিপ্লবের পথও অবলম্বন করেছে। কিন্তু সবই সাময়িকভাবে ব্যর্থতায় পর্য্যবসিত হয়েছে। অবশেষে ১৯২০ অব্দে ব্যর্থতার গ্লানিতে সমাচ্ছন্ন ভারতবাসীরা যখন নতুন পথের সন্ধান করছিল, তখন মহাত্মা গান্ধী অসহযোগিতা এবং আইন অমান্য আন্দোলনের নূতন অস্ত্র নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে অবতীর্ণ হলেন।

 এর পর কুড়ি বৎসরকাল ভারতবাসী নানাপ্রকার দেশাত্মমূলক কাজ করছে। মুক্তির বার্ত্তা ভারতের প্রতি ঘরে ঘরে পৌঁছেচে। ভারতবাসী শিখেছে স্বাধীনতার জন্যে নির্য্যাতন সহ্য করতে, আত্মত্যাগ করতে এবং মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে। শহর থেকে সুদূর গ্রাম অবধি জনগণ একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে সমবেত হল। এইভাবে ভারত শুধু রাজনৈতিক চেতনা লাভই করল না, ভারত আবার একটি অখণ্ড রাজনৈতিক সত্তায় পরিণত হল। এর পর তারা একস্বরে কথা বলতে শিখল এবং এক সাধারণ লক্ষ্যের জন্যে একপ্রাণে একমনে সংগ্রাম করতে পারল। ১৯৩৭ থেকে ১৯৩৯ অব্দ পর্য্যন্ত আটটি প্রদেশে কংগ্রেস মন্ত্রিমণ্ডলের কাজের দ্বারা ভারতীয় জনগণ প্রমাণ দিল যে তারা প্রস্তুত, নিজেদের শাসন-ব্যবস্থা করার মতো ক্ষমতা তারা অর্জ্জন করেছে।

 বর্ত্তমান মহাযুদ্ধের প্রাক্কালে এইভাবে ভারতের মুক্তি-সংগ্রামের জমি তৈরী হয়। এ যুদ্ধে জার্ম্মানী ইউরোপে বৃটিশের উপর প্রচণ্ড আঘাত হানে। এদিকে জাপানও তার মিত্রদের সহযোগিতায় পূর্ব্ব এশিয়ায় বৃটিশের উপর প্রচণ্ড আঘাত করে। বিভিন্ন অবস্থার যোগাযোগে

২২