পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সহযােগিতা দিতে প্রস্তুত কিনা—জানার উদ্দেশ্যে আমাকে ভারত ছেড়ে আসতে হয়েছিল।

 কিন্তু গৃহ এবং দেশত্যাগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্ব্বে, বিদেশ থেকে সাহায্য নেওয়া আমার পক্ষে উচিত হবে কিনা—এ প্রশ্নের মীমাংসা আমাকে করতে হয়েছিল। কি কি উপায়ে অন্যান্য জাতি স্বাধীনতা লাভ করেছে, সেই সব জানার জন্যে আমি ইতিপূর্ব্বে সারা পৃথিবীর বিপ্লবের ইতিহাস পড়েছিলাম। আমি এমন একটি দৃষ্টান্তও পাই নি যেখানে কোন না কোন প্রকারের বিদেশী সাহায্য ছাড়া দাস জাতির স্বাধীনতা লাভ সম্ভব হয়েছে। ১৯৪০ অব্দে আমি আবার গভীর ঐকান্তিকতার সঙ্গে ইতিহাস পাঠ করে এই সিদ্ধান্তে এসেছিলাম, কোন না কোন প্রকারের বিদেশী সাহায্য ছাড়া স্বাধীনতা লাভের উদাহরণ ইতিহাসে নেই। সাহায্য নেওয়া সঙ্গত কিনা—এই নৈতিক প্রশ্ন সম্পর্কে নিজের মনকে বুঝিয়েছিলাম, ব্যক্তিগত জীবনের মতাে রাষ্ট্রীয় জীবনেও ঋণ হিসাবে সাহায্য নেওয়া চলে এবং পরে সে ঋণ শােধ দেওয়া চলে। তাছাড়া বৃটিশ সাম্রাজ্যের মত শক্তিশালী সাম্রাজ্য যদি ভিক্ষার পাত্র হাতে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াতে পারে, তবে আমাদের মতাে কৃতদাস এবং নিরস্ত্র জাতির পক্ষে বিদেশ থেকে ঋণ হিসাবে সাহায্য নেওয়ায় কি আপত্তি থাকতে পারে? মহাত্মাজী, আমি আপনাকে নিশ্চিতরূপে বলতে পারি, এই বিপজ্জনক পথে পা বাড়ানাের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্ব্বে আমি দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ এবং মাসের পর মাস এর অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা করেছি। এতদিন পর্য্যন্ত যথাশক্তি আমার দেশবাসীর সেবা করে পরিণামে বিশ্বাস-ঘাতক হবার কিংবা আমাকে বিশ্বাস-ঘাতক বলে অভিহিত করার কোন সুযােগ কাউকে দেবার ইচ্ছা আমার কখনও হতে পারে না।

 দেশে বসে পূর্ব্বের মতাে কাজ করে যাওয়া ছিল আমার পক্ষে