পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভারত সম্বন্ধে মনোভাব কি জানার জন্যে আমি তাদের সংস্পর্শে এলাম। দেখলাম, গত কয়েক বৎসর যাবৎ বৃটিশ প্রচারকরা যা আমাদের বলছিল, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা—অক্ষ-শক্তিপুঞ্জ এখন খোলাখুলি ভাবেই ভারতের স্বাধীনতার বন্ধু। আমি আরও আবিষ্কার করলাম, আমাদের ইচ্ছানুযায়ী এবং তাদের সামর্থ্যানুযায়ী তারা আমাদের সর্ব্বপ্রকার সাহায্য করতে প্রস্তুত।

 আমি জানি, আমাদের বিপক্ষদল আমার বিরুদ্ধে কি প্রচার-কার্য্য চালাচ্ছে। কিন্তু আমি এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত যে আমার দেশবাসীরা আমাকে ভালভাবে জানেন; তাঁরা বিপক্ষীয়দের ফাঁদে পা দেবেন না। যে লোক জাতীয় আত্মমর্য্যাদা এবং গৌরবের জন্যে সারা জীবন সংগ্রাম করেছে ও দুঃখ-ভোগ করেছে, সে কখনও কোন বিদেশী শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করতে পারে না। তা ছাড়া ব্যক্তিগত দিক থেকেও বিদেশী শক্তির দ্বারা আমার লাভবান হবার কোন সম্ভাবনা নেই। ভারতবাসীর পক্ষে যা পাওয়া সম্ভব, দেশবাসীদের কাছ থেকে সেই শ্রেষ্ঠ সম্মান পেয়ে, বিদেশী শক্তির কাছ থেকে আমার পাওয়ার আর কি থাকতে পারে? সেই ধরণের লোকই শুধু পুতুল হয়ে থাকতে পারে যার কোন গৌরব-বোধ কিংবা আত্মসম্মান-বোধ নেই—যে অন্যের প্রভাবে নিজের জন্য পদ-মর্য্যাদা গড়ে তুলতে চায়।

 আমার সব চেয়ে বড় শত্রুও আমার বিরুদ্ধে একথা বলার সাহস রাখে না যে, আমি জাতীয় গৌরব এবং আত্মসম্মান বিক্রয় করতে পারি। আমার সব চেয়ে বড় শত্রুও বলতে সাহস পাবে না যে, আমার দেশে আমি নগণ্য ব্যক্তি ছিলাম এবং আমার নিজের পদমর্য্যাদা সৃষ্টির জন্যে বিদেশী সাহায্যের প্রয়োজন হয়েছিল। ভারতবর্ষ ছেড়ে আমার নিজের জীবন এবং আমার যা কিছু—সবই বিপন্ন করতে হয়েছিল। আমাকে যে এই বিপদের সম্মুখীন হতে হল, তার কারণ,

৬০