পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এই জাতীয় নেতা সমসাময়িক রাষ্ট্রনায়কদের সকলের চেয়ে বহুগুণে বড়।

 ভারত প্রসঙ্গে এসে আমি একথা বলতে বাধ্য, জাপান তার কাজের দ্বারা ঐকান্তিকতার প্রমাণ দিয়েছে। এমন এক সময় ছিল, যখন লোকে বলত ভারত সম্বন্ধে জাপানের স্বার্থপর অভিপ্রায় আছে। তার যদি স্বার্থের অভিপ্রায়ই থাকত, তবে সে স্বাধীন-ভারতের সাময়িক গবর্নমেণ্টকে স্বীকার করে নিত কি? আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ সে এই সাময়িক গবর্নমেণ্টের হাতে ছেড়ে দেবারই বা সিদ্ধান্ত করত কি? বর্ত্তমানে পোর্টব্লেয়ারে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের জন্যে ভারতীয় চীফ কমিশনার নিযুক্ত করা কি সম্ভব হত? স্বাধীনতার সংগ্রামে পূর্ব্ব-এশিয়ার ভারতীয় জনগণকে জাপান বিনাসর্ত্তে সাহায্য করছে কেন? সমগ্র পূর্ব্ব-এশিয়ায় ভারতীয়রা ছড়িয়ে আছে; তারা খুব নিকট থেকে জাপানীদের দেখবার সুযোগ পায়। জাপানের পরিচয় এবং অকৃত্রিমতা সম্বন্ধে নিঃসংশয় না হলে সমগ্র পূর্ব্ব-এশিয়ার ত্রিশ লক্ষ ভারতীর নরনারী তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার নীতি গ্রহণ করবে কেন? আপনি একজন লোককে বলপ্রয়োগে বাধ্য করতে পারেন কিংবা মিষ্ট কথায় তাকে ভুলিয়ে নিজের ইচ্ছামত কাজ করিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু সমগ্র পূর্ব্ব-এশিয়ায় ছড়ানো ত্রিশ লক্ষ লোককে কেউ বলপ্রয়োগে বাধ্য করতে পারে না।

 পূর্ব্ব-এশিয়ার ভারতীয়রা যদি প্রাণপাত চেষ্টা না করে এবং সর্ব্বাপেক্ষা অধিক স্বার্থত্যাগ না করে জাপানের সাহায্য নিত, তবে তারা অন্যায় কাজের দোষে দোষী হত। কিন্তু ভারতীয়রূপে একথা বলতে আমি আনন্দ ও গর্ব্ব বোধ করি যে পূর্ব্ব-এশিয়াস্থিত আমার স্বদেশবাসীরা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য লোক, অর্থ ও দ্রব্যাদি সংগ্রহ-প্রচেষ্টায় তাদের শ্রেষ্ঠ শক্তি নিয়োগ করছে। স্বদেশে অর্থ ও দ্রব্যাদি সংগ্রহ এবং জাতীয় কার্য্যের জন্য লোক সংগ্রহের বিশবৎসরব্যাপী

৬৬