পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এখন অভিজ্ঞতা আমার কাছে। পূর্ব্ব-এশিয়ার ভারতীয়েরা বর্ত্তমানে যে স্বার্থত্যাগ করছে তার মূল্য আমি সেই অভিজ্ঞতার আলোকে নির্দ্ধারণ করতে পারি। তাদের প্রচেষ্টা অত্যদ্ভুত। তারা সবচেয়ে বেশী স্বার্থত্যাগের জন্যে প্রস্তুত আছে বলেই অস্ত্রশস্ত্র গোলাবারুদ প্রভৃতি যে সব অত্যাবশ্যক দ্রব্য আমরা প্রস্তুত করতে পারি না, সেগুলো সাহায্যস্বরূপ জাপানের কাছ থেকে নেওয়াতে আমি আপত্তির কারণ দেখি না।

 মহাত্মাজী, আমরা এখানে যে সামরিক গবর্নমেণ্ট গঠন করেছি, তার সম্বন্ধে কিছু বলতে চাই। আজাদ হিন্দ (কিংবা স্বাধীন ভারত সাময়িক গবর্নমেণ্ট জাপান, জার্ম্মানী এবং অন্য সাতটি মিত্র গবনমেণ্টের পদ মর্য্যাদা ও সম্মান পেয়েছে। সশস্ত্র সংগ্রামের মারফৎ ব্রিটিশ অধীনতা পাশ থেকে ভারতকে মুক্ত করাই সাময়িক গবর্নমেণ্টের একমাত্র লক্ষ্য। ইংরাজদের ভারত থেকে বিতাড়িত করার পর শান্তি ও শৃঙ্খলা স্থাপিত হলেই সাময়িক গবর্নমেণ্টের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে। মহাত্মাজী, আমি এসম্বন্ধে আপনাকে নিশ্চিন্ত করতে পারি যে, আমি এবং আমার সহকর্ম্মীরা নিজেদের ভারতীয় জনগণের ভৃত্য বলে বিবেচনা করি। আমাদের প্রচেষ্টা, আমাদের যন্ত্রণাভোগ এবং আমাদের স্বার্থত্যাগের পরিবর্ত্তে পুরস্কার স্বরূপ আমরা শুধু চাই মাতৃভূমির স্বাধীনতা। আমাদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন, যাঁরা ভারত স্বাধীন হলেই রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণে ইচ্ছুক। বাকী সকলে স্বাধীন ভারতে যে কোন সাধারণ পদ পেলেই সন্তুষ্ট হবে। আমাদের অন্তরে আজ যে-কথাটা প্রধান জাগছে সেটা হচ্ছে এই যে, বৃটিশ শাসনে সর্ব্বোচ্চ পদের অধিকারী না হয়ে স্বাধীন ভারতে ঝাড়ুদারের কাজ করাও অনেক গুণে ভাল। আমরা সবাই জানি, ভারত স্বাধীন হলে, যাঁদের হাতে ভারতের ভবিষ্যৎ তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে এরূপ লক্ষ লক্ষ সমর্থ নরনারী আমাদের দেশে আছেন।

৬৭