পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ইউরোপে মিত্রপক্ষের অনুপ্রবেশকে আপাতদৃষ্টিতে বিজয় বলে মনে হলেও, তা প্রকৃত বিজয় নয়। এ বিজয় সাময়িক—নেপোলিয়ঁর রাশিয়া-বিজয় ও মস্কো অধিকারের মতো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, জার্ম্মানরা ইংলণ্ড অভিযান করলে বৃটিশরা সিংহের মতো যুদ্ধ করত। দূর মহাদেশের বুকে তারা তেমন যুদ্ধ করতে পারে না—করেও না। সেনাবাহিনী প্রাণহীন যন্ত্রমাত্র নয়। সেনাবাহিনী এমন সব মানুষ নিয়েই গঠিত যাদের অনুভূতি ও হৃদয়াবেগ আছে—যারা বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন প্রকার যুদ্ধ করে। নেপোলিয়ঁ যখন যুবক ও যুদ্ধ-ব্যাপারে অনভিজ্ঞ ছিলেন, তখন অনভিজ্ঞ ফরাসী-বাহিনী যুদ্ধ করে সারা ইউরোপে চমকপ্রদ বিজয়-লাভ করেছিল। সে সময় প্রতিক্রিয়াশীল জগতের আক্রমণ থেকে বিপ্লব ও বিপ্লবী দলকে রক্ষার জন্য সমগ্র ফ্রান্স যুদ্ধ করছিল। কিন্তু সেই একই ফরাসী-বাহিনী পরে শত্রুর হাতে পরাজিত হয়েছিল, অথচ তখন তার অভিজ্ঞতা ছিল বেশী এবং সে বাহিনীর নেতা ছিলেন ইউরোপ-বিজয়ী সম্রাট নেপোলিয়ঁ। বিজয়ের সময় অনভিজ্ঞ ফরাসী-বাহিনী তরুণ নেপোলিয়ঁর অধীনে একটা পবিত্র আদর্শের জন্যে যুদ্ধ করছিল। পরে সেই পবিত্র আদর্শ আর ছিল না—কেন না সম্রাট নেপোলিয়ঁ তখন ইউরোপ-বিজয়ের জন্যে যুদ্ধ করছিলেন। শেষ পর্য্যন্ত সম্রাট নেপোলিয়ঁর নেতৃত্ব সত্ত্বেও ফরাসীবাহিনী পরাজিত হয়েছিল—তার কারণ সে বাহিনীর মনোবল ও যুদ্যোদ্যম নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ইঙ্গ-মার্কিণদের সম্বন্ধেও সেই একই যুক্তি খাটে। তাদের যুদ্ধের পিছনে কোন পবিত্র আদর্শ নেই, তারা শুধু বিশ্ববিজয়ের জন্যে যুদ্ধ করছে—তখন দীর্ঘকাল তাদের মনোবল অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব নয়। কাজেই আমি এই ভবিষ্যদ্বাণী করছি, ইউরোপে যুদ্ধ যতই মন্থর গতিতে চলতে থাকবে, মিত্রপক্ষের মনোবল ততই কমতে থাকবে।

 ইতিপূর্ব্বেই আমি মন্তব্য করেছি, বৃটিশের মনোবল এখনও তুলনা

৭৬