পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করতে হচ্ছে না—পূর্ব্ব-এশিয়ায়ও যুদ্ধ করতে হচ্ছে। এইভাবে তাদের শক্তি এদিকে-ওদিকে ছড়িয়ে পড়ায় এবং জাপানী সেনাবাহিনী নৌবাহিনীর হাতে ইঙ্গ-মার্কিণের ভয়ঙ্কর পরাজয়ের পর ভারতের মুক্তি আন্দোলনের যথেষ্ট সুবিধা হয়েছে। ১৯৩৯-এর সেপ্টেম্বর থেকে ইউরোপের যুদ্ধ এবং ১৯৪১-এর ডিসেম্বর থেকে পূর্ব্ব-এশিয়ার যুদ্ধ ভারতের জনগণকে বুঝিয়ে দিয়েছে, বৃটিশ সিংহের ভয়ে এককালে তারা ভীত ছিল বটে, কিন্তু বৃটিশ-সিংহের পা মাটির তৈরী। ভারতীয় জনগণের কাছে এই ভাবে বৃটিশ-সম্মান ভেঙে পড়ার কারণ পূর্ব্ব-এশিয়ায় জাপানের শক্তি এবং ইউরোপে জার্ম্মানীর শক্তি ভয়ঙ্কর। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং সম্মানের অপূরণীয় হানি হওয়ায়—বৃটিশ-সাম্রাজ্যের আয়ু আজ শেষ হয়ে এসেছে।

 বর্ত্তমানে বিরাট বিশ্বযুদ্ধ চলছে,—বৃটিশরা ভবিষ্যতে তাদের বিশ্বনেতৃত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে পারবে কিনা সেই প্রশ্ন মীমাংসার জন্যে এ যুদ্ধ নয়। সে সমস্যার সমাধান ইতিপূর্ব্বেই হয়ে গেছে। ভবিষ্যৎ দেখতে পারেন এমন অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ইতিবৃত্তবিদের কাছে বৃটিশ-সাম্রাজ্য আজ দরজার পেরেকের মতই মৃত। সমাধানের একটিমাত্র প্রশ্নই আছে; সেটা হচ্ছে এই যে, ভবিষ্যতে বিশ্বকর্ত্তৃত্ব মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে চলে যাবে, না—এমন কোন নতুন বিশ্ববিধান দেখা দেবে যার ফলে পৃথিবীর সমস্ত জাতির স্বাধীন অস্তিত্বের অধিকার স্বীকৃত হবে। কখন আমার সেই সব স্বদেশবাসীর কথা মনে হয়, যাঁরা এখনও এমন যুদ্ধোত্তর পৃথিবীর স্বপ্ন দেখছেন যেখানে বৃটিশ-সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব বজায় থাকবে এবং যে ব্যবস্থায় ভারতীয়রা ক্রীতদাসের মতই থেকে যাবে; তখন এঁদের জন্যে করুণা অনুভব করি—দাসত্বের ফলে এঁদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে গভীর অধঃপতন ঘটেছে। দাসত্বের অন্ধকার এমনভাবে তাঁদের অন্ধ করেছে যে তাঁরা উদীয়মান স্বাধীনতার সূর্য্য আদৌ দেখতে পাচ্ছেন না।

৮৩