পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কারণে যুক্তরাষ্ট্র জাপানকে তার সর্ব্বাপেক্ষা বড় শত্রু ও প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। তা ছাড়া বর্ণ-বৈষম্যের দরুণ আমেরিকানরা জাপানী ও অন্যান্য এশিয়াবাসীদের ঘৃণা করে। কাজেই জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে যুক্তরাষ্ট্রে সহজেই জনপ্রিয় করে তোলা যেত। প্রেসিডেণ্ট রুজভেল্ট অভাবিতপূর্ব্ব উপায়ে মার্কিণ মনোবল বাড়াতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি। এবং তিনি যে তা করেন নি—এর থেকেই বোঝা যায় যে ভাগ্যদেবী জাপান, এশিয়া ও ভারতের কল্যাণ-সাধন করে চলেছেন।

 ইঙ্গ-মার্কিণ পরাজিত হবে—এটা ভাগ্যের নির্দ্দেশ। প্রেসিডেণ্ট রুজভেল্ট তাই ভুল করে “ইউরোপ প্রথম” নীতি গ্রহণ করেছেন। ইউরোপের যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রে আদৌ জনপ্রিয় নয়, এবং তার পিছনে যে সব কারণ আছে, তা নিয়ে এখানে আমাদের আলোচনা নিষ্প্রয়োজন। কাজেই ইউরোপের যুদ্ধ সম্বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রে এমন উৎসাহের সঞ্চার করা সম্ভব নয়, যার ফলে আমেরিকার জনগণ যুদ্ধের জন্যে তাদের সব কিছু বিপন্ন করবার অনুপ্রেরণা পাবে। বর্ত্তমান যুদ্ধের মতো বিরাট যুদ্ধ-জয়ের জন্যে “করব-না-হয়-মরব” মনোবৃত্তি অত্যাবশ্যক। জাপানের তা আছে এবং তাই হবে তার চূড়ান্ত বিজয়ের প্রধান কারণ।

 ইঙ্গ-মার্কিণরা সর্ব্বদাই বলছে, তারা প্রথম ইউরোপের যুদ্ধ শেষ করবে; তারপর সমস্ত শক্তি নিয়ে পূর্ব্ব-এশিয়া এবং জাপানের দিকে ফিরবে। জাপানের বিরুদ্ধে চুংকিং-এর যুদ্ধের সপ্তম বার্ষিকী উপলক্ষে কয়েক মাস পূর্ব্বে প্রধান মন্ত্রী চার্চ্চিল মার্শাল চিয়াংকাইশেকের উদ্দেশে প্রেরিত বাণীতে এই কথারই পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। কিন্তু ইউরোপের যুদ্ধ কি ভাবে শেষ হবে এবং কে তা শেষ করবে—সেটা দেখবার এখনও বাকী আছে। আমার দিক থেকে আমি ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি, “ইউরোপ প্রথম” নীতির ফলে ইঙ্গ-মার্কিণ শক্তি এত ক্ষীণ

৮৫