একদিবস প্রত্যুষে সংবাদ আসিল যে, ঐ দীঘির জলের মধ্যে একটী মনুষ্য-মস্তক দৃষ্টিগোচর হইতেছে।
এই সংবাদ প্রাপ্ত হইয়া আমি সেই স্থানে গমন করিলাম। দেখিলাম, আলুলায়িত কেশযুক্ত একটী মনুষ্য-মস্তক, পূর্ব্বকথিত বটবৃক্ষের একটী অঙ্গে নিমগ্ন শাখায় সংলগ্ন হইয়া জলের মধ্যে ভাসিতেছে। আমি সেই অর্দ্ধশায়িত অশ্বত্থ বৃক্ষের উপর উঠিয়া যতদূর সম্ভব ঐ মস্তকের নিকট গমন করিলাম; দেখিলাম, উহার উপর প্রায় দুই ফিট জল থাকিলেও ঐ স্থানের জলের গভীরতা অধিক; মস্তকের চুল দীর্ঘ বলিয়া অনুমান হইল, সুতরাং মনে করিলাম, উহা কোন স্ত্রীলোকের মৃতদেহ হইবে। আরও মনে করিলাম, ঐ পাড়ার কোন স্ত্রীলোক জলমগ্ন হইয়া প্রাণত্যাগ করিয়াছে, মৃতদেহ উপরে উঠাইলেই উহা যে কাহার মৃতদেহ তাহা কোন না কোন ব্যক্তি বোধ হয় সহজেই চিনিতে পারিবে।
মনে মনে এইরূপ ভাবিয়া ঐ মৃতদেহ উপরে উঠাইবার বন্দোবস্ত করিলাম। ডোম ডাকাইয়া ঐ মৃতদেহ ধীরে ধীরে তীরে আনিতে কহিলাম। উহারা আদেশ প্রতিপালন করিতে সেই অশ্বত্থ বৃক্ষের সাহায্যে সেই স্থানে গমন করিল ও ঐ মস্তক স্পর্শ করিয়াই কহিল, “ইহা দেখিতেছি কেবল মস্তক, ইহার সহিত দেহ নাই।”
ডোমের এই কথা শুনিয়াই ভাবিলাম, আমি পূর্ব্বে যাহা মনে করিয়াছিলাম, এখন দেখিতেছি তাহার বিপরীত। মনে করিয়াছিলাম যে, কোন স্ত্রীলোক জলমগ্ন হইয়া ইহজীবন পরিত্যাগ করিয়াছে, কিন্তু এখন দেখিতেছি, তাহা নহে; যে মস্তকের সহিত দেহ সংযুক্ত নাই, তাহা কোন প্রকারেই জলমগ্নের মস্তক হইতে