পাতা:দুই বোন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দুই বোন
৫১

’পরে একেবারে বিরূপ হয়ে গেল। বললে, “ঈস্, দেখব দেমাক কতদিন টেঁকে।” তার পর থেকে নীরদ যখন অভ্যাসমতাে অত্যন্ত গভীরভাবে কথা কইত শর্মিলা আলাপের মাঝখানে হঠাৎ উঠে’ প’ড়ে ঘাড় বাঁকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে যেত। কিছুদূর পর্যন্ত শােনা যেত তার পায়ের শব্দ। ঊর্মির খাতিরে কিছু বলত না কিন্তু তার না-বলার ব্যঞ্জনা যথেষ্ট তেজোত্তপ্ত ছিল।

 প্রথম প্রথম নীরদ প্রতি মেলে চিঠিপত্রে চার-পাঁচ পাতা ধ’রে বিস্তারিত উপদেশ দিয়ে এসেছে। কিছুদিন পরে চমক লাগিয়ে দিলে টেলিগ্রাম। বড়াে অঙ্কের টাকার জরুরী দাবি, অধ্যয়নের প্রয়ােজনে। যে গর্ব এতদিন ঊর্মির প্রধান সম্বল ছিল তাতে যথেষ্ট ঘা লাগল বটে কিন্তু মনে একটু সান্ত্বনাও পেলে। যত দিন যায়, এবং নীরদের অনুপস্থিতি দীর্ঘ হয়ে ওঠে, ততই উর্মির পূর্ব স্বভাবটা কর্তব্যের বেড়ার মধ্যে ফাঁক খুঁজে বেড়ায়। নিজেকে নানাছলে ফাঁকিও দেয় অনুতাপও করে। এইরকম আত্মগ্লানির সময় নীরদকে অর্থসাহায্য ওর পরিতপ্ত মনের সান্ত্বনাজনক।

 ঊর্মি টেলিগ্রামটা ম্যানেজারের হাতে দিয়ে সসংকোচে বলে, “কাকাবাবু, টাকাটা—”