পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দুর্গেশনন্দিনী

লােচনযুগল বিনত করিলেন! সহচরী, বাক্যের উত্তর না পাইয়া পথিকের মুখপানে চাহিলেন! কোন্ দিকে তাঁহার দৃষ্টি, তাহাও নিরীক্ষণ করিলেন, এবং সমভিব্যাহারিণী যে যুবক প্রতি সতৃষ্ণনয়নে চাহিতেছিলেন, তাহা জানিতে পারিয়া নবীনার কাণে কাণে কহিলেন, “কি লাে? শিবসাক্ষাৎ স্বয়ংবরা হবি না কি?”

 নবীন, সহচরীকে অঙ্গুলিপীড়িত করিয়া তদ্রুপ মৃদুস্বরে কহিল, “তুমি নিপাত যাও!” চতুরা সহচারিণী এই দেখিয়া মনে মনে ভাবিলেন যে, যে লক্ষণ দেখিতেছি, পাছে এই অপরিচিত যুবাপুরুষের তেজঃপুঞ্জ কান্তি দেখিয়া, আমার হস্তসমর্পিতা এই বালিকা মন্মথজালে বিদ্ধ হয়, তাতে আর কিছু হউক, না হউক, ইহার মনের সুখ চিরকালের জন্য নষ্ট হইবে, অতএব সে পথ এখনই রুদ্ধ করা আবশ্যক। কিরূপেই বা এ অভিপ্রায় সিদ্ধ হয়? যদি ইঙ্গিতে বা ছলনাক্রমে যুবককে স্থানান্তরে প্রেরণ করিতে পারি, তবে তাহা কর্তব্য বটে, এই ভাবিয়া নারী-স্বভাব-সিদ্ধ চতুরতার সহিত কহিলেন, “মহাশয়! স্ত্রীলোকের সুনাম এমনি অপদার্থ বস্তু যে, বাতাসের ভর সহে না। আজিকার এ প্রবল ঝড়ে রক্ষা পাওয়া দুষ্কর, অতএব এক্ষণে ঝড় থামিয়াছে, দেখি যদি আমরা পদব্রজে বাটী গমন করিতে পারি।”

 যুবাপুরুষ উত্তর করিলেন, “যদি একান্ত এ নিশীথে আপনারা পদব্রজে যাইবেন, তবে আমি আপনাদিগকে রাখিয়া আসিতেছি। এক্ষণে আকাশ পরিষ্কার হইয়াছে, আমি এতক্ষণ নিজস্থানে যাত্রা করিতাম, কিন্তু আপনার সখীর সদৃশ রূপসীকে বিনা রক্ষকে রাখিয়া যাইব না বলিয়াই এখনও এস্থানে আছি।”

 কামিনী উত্তর করিল, “আপনি আমাদিগের প্রতি যেরূপ দয়া প্রকাশ