পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৬
দুর্গেশনন্দিনী

অঙ্গের অস্ত্রক্ষতের হেতু পীড়িত হইয়া শয্যাগত আছেন। কতলু খাঁর অজ্ঞাতসারে তাঁহাকে অন্তঃপুরেই রাখিয়াছি। সেখানে বিশেষ যত্ন হইবে বলিয়া রাখিয়াছি।

 বিমলা শুনিয়া বলিলেন, “এ অভাগিনীদিগের সম্পর্কমাত্রেই অমঙ্গল বটিয়াছে। সে সকল দেবতাকৃত। এক্ষণে যদি রাজপুত্র পুনর্জ্জীবিত হয়েন, তবে তাহার আরোগা-প্রাপ্তির পর এই পত্রখানি তাঁহাকে দিবেন; আপাততঃ আপনার নিকট রাখিবেন। এইমাত্র আমার ভিক্ষা।”

 ওস্মান লিপি প্রত্যর্পণ করিয়া কহিলেন, “ইহা আমার অনুচিত কার্য্য; রাজপুত্র যে অবস্থাতেই থাকুন, তিনি বন্দী বলিয়া গণ্য। বন্দীদিগের নিকট কোন লিপি, আমরা নিজে পাঠ না করিয়া, যাইতে দেওয়া অবৈধ এবং আমার প্রভুর আদেশবিরুদ্ধ।”

 বিমলা কহিলেন, “এ লিপির মধ্যে আপনাদিগের, অনিষ্টকারক কোনও কথাই নাই। সুতরাং অবৈধ কার্য্য হইব না, আর প্রভুর আদেশ? আপনি আপন প্রভু।”

 ওসমান কহিলেন, “অন্যান্য বিষয়ে আমি পিতৃব্যের আদেশবিরুদ্ধ আচরণ কখন করিতে পারি; কিন্তু এসকল বিষয়ে নহে। আপনি যখন কহিতেছেন যে, এই লিপিমধ্যে বিরুদ্ধ কথা নাই, তখন সেইরূপই আমার প্রতীতি হইতেছে, কিন্তু এ বিষয়ে নিয়মভঙ্গ করিতে পারি না। আমা হইতে এ কার্য্য হবে না।”

 বিমলা ক্ষুণ্ণ হইয়া কহিলেন, “তবে আপনি পাঠ করিয়াই দিবেন।”

 ওস্মান লিপি গ্রহণ করিয়া পাঠ করিতে আরম্ভ করিলেন।