লয়; ঐ পাদবিক্ষেপের লয়, তোমার হৃদয়মধ্যে হইতেছে। হস্তে ঐ কুসুমদাম দেখ, হস্তপ্রভায় কুসুম মলিন হইয়াছে দেখিয়াছ? কণ্ঠের প্রভায় স্বর্ণহার দীপ্তিমান্ হইয়াছে দেখিয়াছ? তোমার চক্ষের পলক পড়ে না কেন? দেখিয়াছ, কি সুন্দর গ্রীবাভঙ্গী? দেখিয়াছ, প্রস্তরধবল গ্রীবার উপর কেমন নিবিড় কুঞ্চিত কেশগুচ্ছ পড়িয়াছে? দেখিয়াছ, তৎপার্শ্বে কেমন কর্ণভূষা দুলিতেছে? মস্তকের ঈষৎ―ঈষৎমাত্র বঙ্কিম্ ভঙ্গী দেখিয়াছ? ও কেবল ঈষৎ দৈর্ঘ্যহেতু। অত একদৃষ্টে চাহিতেছ কেন? আয়েষা কি মনে করিবে?
যতদিন জগৎসিংহের রোগের শুশ্রূষা আবশ্যক হইল, ততদিন পর্য্যন্ত আয়েষা প্রত্যহ এইরূপ অনবরত তাহাতে নিযুক্ত রহিলেন। ক্রমে যেমন রাজপুত্রের রোগের উপশম হইতে লাগিল, তেমনি আয়েষারও যাতায়াত কমিতে লাগিল; যখন রাজপুত্রের রোগ নিঃশেষ হইল, তখন আয়েষার জগৎসিংহের নিকট যাতায়াত প্রায় একেবারে শেষ হইল; কদাচিৎ দুই একবার আসিতেন। যেমন শীতার্ত্ত ব্যক্তির অঙ্গ হইতে ক্রমে ক্রমে বেলাধিক্যে রৌদ্র সরিয়া যায়, আয়েষা সেইরূপ ক্রমে ক্রমে জগৎসিংহ হইতে আরোগ্য-কালে সরিয়া যাইতে লাগিলেন।
একদিন গৃহমধ্যে অপরাহ্ণে জগৎসিংহ গবাক্ষে দাঁড়াইয়া দুর্গের বাহিরে দৃষ্টিপাত করিতেছেন; কত লোক অবাধে নিজ নিজ ঈপ্সিত বা প্রয়োজনীয় স্থানে যাতায়াত করিতেছে, রাজপুত্র দুঃখিত হইয়া তাহাদিগের অবস্থার সহিত আত্মাবস্থা তুলনা করিতেছিলেন। একস্থানে কয়েক জন লোক মণ্ডলীকৃত হইয়া কোন ব্যক্তি বা বস্তু বেষ্টনপূর্ব্বক দাঁড়াইয়াছিল। রাজপুত্রের প্রতি দৃষ্টিপাত হইল। বুঝিতে পারিলেন যে, লোকগুলি কোন আমোদে নিযুক্ত আছে, মন দিয়া কিছু