পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭০
দুর্গেশনন্দিনী

 রাজপুত্র হাস্য করিয়া কহিলেন, “সেনাপতি, আপনি যদি আমাকে ভয় প্রদর্শন করিতে আসিয়া থাকেন, তবে যত্ন বিফল জ্ঞান করুন।”

 ওস্‌মান কহিলেন, “রাজপুত্র, আমরা পরস্পর-সন্নিধানে এরূপ পরিচিত আছি যে, মিথ্যা বাগাড়ম্বর কাহারও উদ্দেশ্য হইতে পারে না। আমি আপনার নিকট বিশেষ কার্য্যসিদ্ধির জন্য আসিয়াছি।”

 জগৎসিংহ কিঞ্চিৎ বিস্মিত হইলেন। কহিলেন, “অনুমতি করুন।”

 ওস্‌মান কহিলেন, “আমি এক্ষণে যে প্রস্তাব করিব, তাহা কতলু খাঁর আদেশমত কহিতেছি, জানিবেন।”

 জ। উত্তম।

 ও। “শ্রবণ করুন। রাজপুতপাঠানের যুদ্ধে উভয় কুল ক্ষয় হইতেছে।”

 রাজপুত্র কহিলেন, “পাঠানকুল ক্ষয় করাই যুদ্ধের উদ্দেশ্য।”

 ওস্‌মান কহিলেন, “সত্য বটে, কিন্তু উভয় কুল নিপাত ব্যতীত একের উচ্ছেদ কতদূর সম্ভাবনা, তাহাও দেখিতে পাইতেছেন। গড়মান্দারণ-জেতৃগণ নিতান্ত বলহীন নহে, দেখিয়াছেন।”

 জগৎসিংহ ঈষন্মাত্র সহাস্য হইয়া কহিলেন, “তাঁহারা কৌশলময় বটে।”

 ওস্‌মান কহিতে লাগিলেন, “যাহাই হউক, আত্মগরিমা আমার উদ্দেশ্য নহে। মোগল সম্রাটের সহিত চিরদিন বিবাদ করিয়া পাঠানের উৎকলে তিষ্ঠান সুখের হইবে না। কিন্তু মোগল সম্রাট্‌ও পাঠানদিগকে কদাচ নিজকরতলস্থ করিতে পারিবেন না। আমার কথা, আত্মশ্লাঘা বিবেচনা করিবেন না। আপনি ত রাজনীতিজ্ঞ বটে, ভাবিয়া দেখুন, দিল্লী হইতে উৎকল কতদূর। দিলীশ্বর যেন মানসিংহের বাহুবলে এবার পাঠানজয় করিলেন; কিন্তু কতদিন তাঁহার জয়-পতাকা উড়িবে? মহারাজ মানসিংহ সসৈন্য পশ্চাৎ হইবেন, আর উৎকলে .