১৭৮
দুর্গেশনন্দিনী
করিতেছিলেন; মস্তকে হস্ত দিয়া তাহার মুখ তুলিয়া দেখিলেন, চক্ষুর জলে মুখ প্লাবিত রহিয়াছে; অঞ্চল স্পর্শ করিয়া দেখিলেন, অঞ্চল সম্পূর্ণ আর্দ্র। যে উপাধানে মাথা রাখিয়া তিলোত্তমা শয়ন করিয়াছিলেন, তাহাতে হাত দিয়া দেখিলেন, তাহাও প্লাবিত। বিমলা কহিলেন, “এমন দিবানিশি কাঁদিলে শরীর কয় দিন বহিবে?”
তিলোত্তমা আগ্রহসহকারে কহিলেন, “বহিয়া কাজ কি? এতদিন বহিল কেন, এই মনস্তাপ।”
বিমলা নিরুত্তর হইলেন। তিনিও রোদন করিতে লাগিলেন।
কিয়ৎক্ষণ পরে বিমলা দীর্ঘনিঃশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া কহিলেন, “এখন আজিকার উপায়?”
তিলোত্তমা অসন্তোষের সহিত বিমলার অলঙ্কারাদির দিকে পুনর্ব্বার চক্ষুঃপাত করিয়া কহিলেন, “উপায়ের প্রয়োজন কি?”
বিমলা কহিলেন, “বাছা তাচ্ছিল্য করিও না। আজও কি কতলু খাঁকে বিশেষ জান না? আপনার অবকাশ অভাবেও বটে, আমাদিগের শোক-নিবারণার্থ অবকাশ দেওয়ার অভিলাষেও বটে, এ পর্য্যন্ত দুরাত্মা আমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছে; আজ পর্য্যন্ত আমাদিগের অবসরের যে সীমা, পূর্ব্বেই বলিয়া দিয়াছে। সুতরাং আজ আমাদিগকে নৃত্যশালায় না দেখিলে না জানি কি প্রমাদ ঘটাইবে।”
তিলোত্তমা কহিলেন, “আবার প্রমাদ কি?”
বিমলা কিঞ্চিৎ স্থির হইয়া কহিলেন, “তিলোত্তমা, একবারে নিরাশ হও কেন? এখনও আমাদিগের প্রাণ আছে, ধর্ম্ম আছে; যত দিন প্রাণ আছে, তত দিন ধর্ম্ম রাখিব।”
তিলোত্তমা তখন কহিলেন, “তবে মা! এই সকল অলঙ্কার