পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
দুর্গেশনন্দিনী

একেবারে বিনষ্ট হইতে হইবে। এরূপ অন্যায় সাহসে ভর করিয়া দিল্লীশ্বরের এত অধিক সেনানাশের সম্ভাবনা জন্মান, এবং উড়িষ্যাজয়ের আশা একেবারে লোপ করা, আমার বিবেচনায় অনুচিত হইতেছে; সৈদ খাঁর প্রতীক্ষা করাই উচিত হইতেছে; অথচ বৈরিশাসনের আশু কোন উপায় করা ও আবশ্যক হইতেছে। তোমরা কি পরামর্শ দাও?”

 বৃদ্ধ সেনাপতিগণ সকলে একমত হইয়া এই পরামর্শ স্থির করিলেন যে, আপাততঃ সৈদ খাঁর প্রতীক্ষায় থাকাই কর্ত্তব্য। রাজা মানসিংহ কহিলেন, “আমি অভিপ্রায় করিতেছি যে, সমুদায় সৈন্য-নাশের সম্ভাবনা না রাখিয়া, কেবল অল্পসংখ্যক সেনা কোন দক্ষ সেনাপতির সহিত শত্রুসমক্ষে প্রেরণ করি।”

 একজন প্রাচীন মোগল-সৈনিক কহিলেন, “মহারাজ! যথায় তাবৎ সেনা পাঠাইতেও আশঙ্কা, তথায় অল্পসংখ্যক সেনা দ্বারা কোন কার্য্য সাধন হইবেক?”

 মানসিংহ কহিলেন, “অল্প সেনা সম্মুখ রণে-অগ্রসর হইতে পাঠাইতে চাহিতেছি না। ক্ষুদ্র বল অস্পষ্ট থাকিয়া গ্রামপীড়নাসক্ত পাঠানদিগের সামান্য দল সকল কতক মনে রাখিতে পারিবেক।”

 তখন মোগল কহিল, “মহারাজ! নিশ্চিত কালগ্রাসে কোন্ সেনাপতি যাইবে?”

 মানসিংহ ভ্রুভঙ্গী করিয়া কহিলেন, “কি? এই রাজপুত ও মোগলসেনামধ্যে মৃত্যুকে ভয় করে না এমন কি কেহই নাই?”

 এই কথা শ্রুতিমাত্র পাঁচ-সাত জন মোগল ও রাজপুত গাত্রোত্থান করিয়া কহিল, “মহারাজ! দাসেরা বাইতে প্রস্তুত আছে।” জগৎসিংহ ও