পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 এদিকে পুত্ত্র দেশান্তরে যাইলে পর, বৃদ্ধ ভূস্বামীর অন্তঃকরণে পুত্ত্রবিচ্ছেদে মনঃপীড়ার সঞ্চার হইতে লাগিল, গতানুশোচনার পরবশ হইয়া পুত্রের সংবাদ আনয়নে যত্নবান্ হইলেন; কিন্তু যত্নে কৃতকার্য্য হইতে পারিলেন না। পুত্ত্রকে পুনরানয়ন করিতে না পারিয়া, তৎপরিবর্ত্তে পুত্ত্রবধূকে দরিদ্রার গৃহ হইতে সাদরে নিজালয়ে আনিলেন। উপযুক্ত কালে বীরেন্দ্রসিংহের পত্নী এক কন্যা প্রসব করিলেন। কিছুদিন পরে কন্যার প্রসূতির পরলোক-প্রাপ্তি হইল।

 বীরেন্দ্র দিল্লীতে উপনীত হইয়া মোগল-সম্রাটের আজ্ঞাকারী রাজপুত সেনামধ্যে যোদ্ধৃত্বে বৃত হইলেন; অল্পকালে নিজগুণে উচ্চপদস্থ হইতে পারিলেন। বীরেন্দ্রসিংহ কয়েক বৎসর ধন ও যশঃসঞ্চয় করিয়া পিতার লোকান্তর-সংবাদ পাইলেন। আর এক্ষণে বিদেশ-পর্য্যটন বা পরাধীন-বৃত্তি নিষ্প্রয়োজন বিবেচনা করিয়া বাটী প্রত্যাগমন করিলেন। বীরেন্দ্রের সহিত দিল্লী হইতে অনেকানেক সহচর আসিয়াছিল। তন্মধ্যে জনৈক পরিচারিকা আর এক পরমহংস ছিলেন। এই আখ্যায়িকায় এই দুই জনের পরিচয় আবশ্যক হইবেক। পরিচারিকার নাম বিমলা, পরমহংসের নাম অভিরাম স্বামী।

 বিমলা গৃহমধ্যে গৃহকর্ম্মে, বিশেষতঃ বীরেন্দ্রর কন্যার লালন-পালন ও রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত থাকিতেন, তদ্ব্যতীত দুর্গমধ্যে বিমলার অবস্থিতি করার অন্য কারণ লক্ষিত হইত না; সুতরাং তাঁহাকে দাসী বলিতে বাধ্য হইয়াছি; কিন্তু বিমলাতে দাসীর লক্ষণ কিছুই ছিল না। গৃহিণী যাদৃশী মান্যা, বিমলা পৌরগণের নিকটে প্রায় তাদৃশী মান্যা ছিলেন; পৌরজন সকলেই তাঁহার বাধ্য ছিল। মুখশ্রী দেখিলে, বোধ হইত যে, বিমলা যৌবনে পরমা সুন্দরী ছিলেন। প্রভাতে চন্দ্রাস্তের ন্যায় সে রূপের