প্রতিভা এ বয়সেও ছিল। গজপতি বিদ্যাদিগ্গজ নামে অভিরাম স্বামীর একজন শিষ্য ছিলেন; তাঁহার অলঙ্কার-শাস্ত্রে যত ব্যুৎপত্তি থাকুক বা না থাকুক, রসিকতা প্রকাশ করার তৃষ্ণাটা বড় প্রবল ছিল। তিনি বিমলাকে দেখিয়া বলিতেন, “দাই যেন ভাণ্ডস্থ ঘৃত; মদন-আগুন যত শীতল হইতেছে, দেহখানি ততই জমাট বাধিতেছে।” এইখানে বলা উচিত, যেদিন গজপতি বিদ্যাদিগ্গজ এইরূপ রসিকতা করিয়া ফেলিলেন, সেই দিন অবধি বিমলা তাঁহার নাম রাখিলেন—‘রসিকরাজ রসোপাধ্যায়।”
আকারেঙ্গিত ব্যতীত বিমলার সভ্যতা ও বাগ্-বৈদগ্ধ্য এমন প্রসিদ্ধ ছিল যে, তাহা সামান্যা পরিচারিকার সম্ভবে না। অনেকে এরূপ বলিতেন যে, বিমলা বহুকাল মোগল-সম্রাটের পুরবাসিনী ছিলেন; একথা সত্য কি মিথ্যা, তাহা বিমলাই জানিতেন, কিন্তু কখন সে বিষয়ের কোন প্রসঙ্গ করিতেন না।
বিমলা, বিধবা কি সধবা? কে জানে? তিনি অলঙ্কার পরিতেন, একাদশী করিতেন না। সধবার ন্যায় আচরণ করিতেন।
দুর্গেশনন্দিনী তিলোত্তমাকে বিমলা যে আন্তরিক স্নেহ করিতেন, তাহার পরিচয় মন্দিরমধ্যে দেওয়া গিয়াছে। তিলোত্তমাও বিমলার তদ্রূপ অনুরাগিণী ছিলেন। বীরেন্দ্রসিংহের অপর সমভিব্যাহারী অভিরাম স্বামী সর্ব্বদা দুর্গমধ্যে থাকিতেন না। মধ্যে মধ্যে দেশপর্য্যটনে গমন করিতেন; দুই এক মাস গড়মান্দারণে, দুই একমাস বিদেশ-পরিভ্রমণে যাপন করিতেন। পুরবাসী ও অপরাপর লোকের এইরূপ প্রতীতি ছিল যে, অভিরাম স্বামী বীরেন্দ্রসিংহের দীক্ষাগুরু; বীরেন্দ্রসিংহ তাঁহাকে যেরূপ সম্মান এবং আদর করিতেন, তাহাতে সেইরূপই সম্ভাবনা। এমন কি,