পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
দুর্গেশনন্দিনী

বায়ু লাগিতেছে না। গোচারণ দেখিতেছেন? তাও নয়, গাভী সকল ত ক্রমে ক্রমে গৃহে আসিল। কোকিল-রব শুনিতেছেন? তবে মুখ এত ম্লান কেন? তিলোত্তমা কিছুই দেখিতেছেন না, শুনিতেছেন না—চিন্তা করিতেছেন।

 দাসীতে প্রদীপ জ্বালিয়া আনিল। তিলোত্তমা চিন্তা ত্যাগ করিয়া একখান পুস্তক লইয়া প্রদীপের কাছে বসিলেন। তিলোত্তমা পড়িতে জানিতেন; অভিরাম স্বামীর নিকট সংস্কৃত পড়িতে শিখিয়াছিলেন। পুস্তকখানি কাদম্বরী। কিয়ৎক্ষণ পড়িয়া বিরক্তি প্রকাশ করিয়া কাদম্বরী পরিত্যাগ করিলেন। আর একখান পুস্তক আনিলেন; সুবন্ধকৃত বাসবদত্তা; কখন পড়েন, কখন ভাবেন, আর বার পড়েন, আর বার অন্য মনে ভাবেন; বাসবদত্তাও ভাল লাগিল না। তাহা ত্যাগ করিয়া গীতগোবিন্দ পড়িতে লাগিলেন; গীতগোবিন্দ কিছুক্ষণ ভাল লাগিল, পড়িতে পড়িতে সলজ্জ ঈষৎ হাসি হাসিয়া পুস্তক নিক্ষেপ করিলেন। পরে নিষ্কর্ম্মা হইয়া শয্যার উপরে বসিয়া রহিলেন। নিকটে একটা লেখনী ও মসীপাত্র ছিল; অন্যমনে তাহা লইয়া পালঙ্কের কাছে এ তা “ক” “স” “ম” ঘর, দ্বার, গাছ, মানুষ ইত্যাদি লিখিতে লাগিলেন; ক্রমে ক্রমে খাটের এক বাজু কালীর চিহ্নে পরিপূর্ণ হইল; যখন আর স্থান নাই, তখন সে বিষয়ে চেতনা হইল। নিজ কার্য্য দেখিয়া ঈষৎ হাস্য করিলেন; আবার কি লিখিয়াছেন, তাহা হাসিতে হাসিতে পড়িতে লাগিলেন। কি লিখিয়াছেন? “বাসবদত্তা”, “মহাশ্বেতা”, “ক”, “ঈ”, “ই”, “প”, একটা বৃক্ষ, সেঁজুতির শিব, “গীতগোবিন্দ”, “বিমলা”, লতা, পাতা, হিজি, বিজি, গড়—সর্বনাশ আর কি লিখিয়াছেন?

“কুমার জগৎসিংহ”