পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
দুর্গেশনন্দিনী

সসন্যৈ হইয়া তাহা একেবারে নিঃশেষ করিতেন। তাঁহার বহুসংখ্যক চর ছিল; তাহারা ফলমূল-মৎস্যাদিবিক্রেতা বা ভিক্ষুক উদাসীন ব্রাহ্মণ-বৈদ্যাদির বেশে নানা স্থানে ভ্রমণ করি, পাঠান-সেনার গতিবিধির সন্ধান আনিয়া দিত। জগৎসিংহ সংবাদ পাইবামার অতি সাবধানে অথচ দ্রুতগতি, এমন স্থানে গিয়া সৈন্য সংস্থাপন করিতেন যে, যেন আগন্তুক পাঠান-সেনার উপরে সুকৌশলে এবং অপূর্ব্বদৃষ্ট হইয়া আক্রমণ করিতে পারেন। যদি পাঠান-সেনা অধিক-সংখ্যক হইত, তবে জগৎসিংহ তাহাদিগকে আক্রমণ করার কোন স্পষ্ট উদ্যম করিতেন না, কেন না তিনি জানিতেন, তাঁহার বর্তমান অবস্থায় এক যুদ্ধে পরাজয় হইলে সকল নষ্ট হইবে; তখন কেবল পাঠান-সেনা চলিয়া গেলে, সাবধানে তাহার পশ্চা পশ্চাৎ গিয়া তাহাদিগের আহারীয় দ্রব্য, অশ্ব, কানান ইত্যাদি অপহরণ করিয়া লইয়া চলিয়া আসিতেন। আর যদি পাঠান-সেনা প্রবল না স্বল্পসংখ্যক হইত, তবে যতক্ষণে সেনা নিজ মনোমতস্থান পর্য্যন্ত না আসিত, সে পর্য্যন্ত স্থির হইয়া গোপনীয় স্থানে থাকিতেন; পরে সময় বুঝিয়া ক্ষুধিত ব্যাঘ্রের ন্যায় চীৎকার-শব্দে ধাবমান হইয়। হতভাগ্য পাঠানদিগকে খণ্ড খণ্ড করিয়া ফেলিতেন। সে অবস্থার পাঠানেরা শত্রুর নিকটস্থিতি অবগত থাকিত না; সুতরাং রণজন্য প্রস্তুত থাকিত না। অকস্মাৎ শত্রুপ্রবাহমুখে পতিত হইয়া প্রায় বিনা যুদ্ধেই প্রাণ হারাইত।

 এইরূপে বহুতর পাঠান-সৈন্য নিপাত হইল। পাঠানেরা অত্যন্ত ব্যতিব্যস্ত হইল; এবং সম্মুখ-সংগ্রামে জগৎসিংহের সৈন্য বিনষ্ট করিবার জন্য বিশেষ সযত্ন হইল; কিন্তু জগৎসিংহের সৈন্য কোথায় থাকে, কোন সন্ধান পাওয়া যায় না; কেবল যমদূতের ন্যায় পাঠান-সেনার মৃত্যুকালে একবার দেখা দিয়া মৃত্যুকার্য্য সম্পাদন করিয়া অন্তর্ধান করে। জগৎসিংহ কৌশল