পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মন্ত্রণার পর উদ্যোগ
৪৩

পরিপূর্ণা। বিমলার চক্ষু সেইরূপ। আমি নিশ্চিত পাঠক মহাশয়কে বলিতেছি, বিমলা যুবতী, স্থিরযৌবনা বলিলেও বলা যায়। তাহার সে চম্পকবর্ণ ত্বকের কোমলতা দেখিলেকে বলিবে যে, ষোড়শী তাহার অপেক্ষা কোমলা? যে একটী অতিক্ষুদ্র গুচ্ছ অলক-কেশ কুঞ্চিত হইয়া কর্ণমূল হইতে অসাবধানে কপোলদেশে পড়িয়াছে, কে দেখিয়া বলিবে যে, যুবতীর কপোল যুবতীর কেশ পড়ে নাই? পাঠক! মনশ্চক্ষু উন্মীলন কর, যেখানে বসিয়া দর্পণ-সম্মুখে বিমলা কেশ-বিন্যাস করিতেছে, তাহা দেখ; বিপুল কেশগুচ্ছ বাম করে লইয়া সম্মুখে রাখিয়া যে প্রকারে তাহাতে চিরুণী দিতেছে, দেখ; নিজ যৌবন-ভাব দেখিয়া টিপি টিপি যে হাসিতেছে; তাহা দেখ; মধ্যে মধ্যে বীণানিন্দিত মধুরস্বরে সে মৃদু মৃদু সঙ্গীত করিতেছে; তাহা শ্রবণ কর; দেখিয়া শুনিয়া বল, বিমলা অপেক্ষা কোন্ নবীন তোমার মনোমোহিনী?

 বিমলা কেশ বিন্যস্ত করিয়া কবরী বন্ধন করলেন না; পৃষ্ঠদেশে বেণী লম্বিত করিলেন। গন্ধবারিসিক্ত রুমালে মুখ পরিষ্কার করিলেন; গোলাপ-পুগ-কর্পূর-পূর্ণ তাম্বুলে পুনর্ব্বার ওষ্ঠাধর রঞ্জন করিলেন; মুক্তাভূষিত কাঁচলি লইয়া বক্ষে দিলেন; সঙ্গে কনকরত্নভূষা পরিধান করিলেন; আবার কি ভাবিয়া তাহার কিয়দংশ পরিত্যাগ করিলেন; বিচিত্র কারুকার্য্য-খচিত বসন পরিলেন; মুক্তা-শোভিত পাদুকা গ্রহণ করিলেন; এবং সুবিন্যস্ত চিকুরে যুবরাজ বহুমূল্য মুক্তাহার রোপিত করিলেন।

 বিমলা বেশ করিয়া তিলোত্তমার কক্ষে গমন করিলেন। তিলোত্তমা দেখিবামাত্র বিস্ময়াপন্ন হইলেন; হাসিয়া কহিলেন,—“একি বিমলা! এ বেশ কেন?”