পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৮
দুর্গেশনন্দিনী

 দিগ্‌গজ নিঃশ্বাস রহিত করিয়া শুনিতে লাগিলেন। যখন বিমলা সমাপ্ত করিলেন, তখন গজপতি কহিলেন, “আবার।”

বি। আবার কি?
দি। আবার একটি গাও।
বি। কি গায়িব?
দি। একটি বাঙ্গালা গাও।

 “গায়িতেছি” বলিয়া বিমলা পুনর্ব্বার সঙ্গীত আরম্ভ করিলেন।

 গীত গায়িতে গায়িতে বিমলা জানিতে পারিলেন যে, তাঁহার অঞ্চলে বিষম টান পড়িয়াছে; পশ্চাৎ ফিরিয়া দেখিলেন, গজপতি একেবারে তাঁহার গায়ের উপর আসিয়া পড়িয়াছেন, প্রাণপণে তাঁহার অঞ্চল ধরিয়াছেন। বিমলা বিস্ময়াপন্ন হইয়া কহিলেন,—“কি হইয়াছে? আবার ভূত নাকি?”

 ব্রাহ্মণের বাক্য সরে না, কেবল অঙ্গুলি নির্দ্দেশ করিয়া দেখাইলেন—“ঐ”।

 বিমলা নিস্তব্ধ হইয়া সেই দিকে নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন। ঘন ঘন প্রবল নিঃশ্বাসশব্দ তাঁহার কর্ণকুহরে প্রবেশ করিল, এবং নির্দ্দিষ্টদিকে পথপার্শ্বে একটা পদার্থ দেখিতে পাইলেন।

 সাহসে নির্ভর করিয়া নিকটে গিয়া বিমলা দেখিলেন,—একটি সুগঠন সুসজ্জীভূত অশ্ব মৃত্যুযাতনায় পড়িয়া নিঃশ্বাস ত্যাগ করিতেছে।

 বিমলা পথবাহন করিতে লাগিলেন। সুসজ্জীভূত সৈনিক-অশ্ব পথিমধ্যে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখিয়া তিনি চিন্তামগ্ন হইলেন। অনেকক্ষণ কথা কহিলেন না। প্রায় অর্ধক্রোশ অতিবাহিত করিলে, গজপতি আবার তাঁহার অঞ্চল ধরিয়া টানিলেন।