পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দিগ্‌গজের সাহস
৬৯

 বিমলা বলিলেন, “কি?”

 গজপতি একটি দ্রব্য লইয়া দেখাইলেন। বিমলা দেখিয়া বলিলেন,“এ সিপাহীর পাগড়ী।” বিমলা পুনর্ব্বার চিন্তায় মগ্ন হইলেন, আপনাআপনি কহিতে লাগিলেন, “যারই ঘােড়া, তারই পাগ্ড়ি? না, এ ত পদাতিকের পাগড়ি!”

 কিয়ৎক্ষণ পরে চন্দ্রোদয় হল। বিমলা অধিকতর অন্যমনা হইলেন। অনেকক্ষণ পরে গজপতি সাহস করিয়া ছিজ্ঞান করিলেন, “সুন্দরি, আরস কথা কহ না যে?”

 বিমলা কহিলেন, “পথে কিছু চিহ্ন দেখিতেছ?”

 গজপতি বিশেষ মনােযোগের সহিত পথ নিরীক্ষণ করিয়া দেখিয়া কতিগণ,—“দেখিতেছি, অনেক ঘোড়ার পায়ের চিহ্ন!”

বি। বুদ্ধিমান—কিছু বুঝিতে পারিলে?
দি। না?
বি। ওখানে মরা ঘােড়া, সেখানে সিপাহীর পাগড়ি, এখানে এত ঘােড়ার পায়ের চিহ্ন, এতে কিছু বুঝিতে পারিলে না?—কারেই বা বলি!
দি। কি?
বি। এখনই বহুতর সেনা এই পথে গিয়াছে।”

 গজপতি ভীত হইয়া কহিলেন, “তবে একটু আস্তে হাঁট; তারা খুব আগু হইয়া যাক্।”

 বিমলা হাস্য করিয়া বলিলেন, “মুর্খ! তাহারা আগু হইবে কি? কোন্ দিকে ঘােড়ার খুরের সম্মুখ, দেখিতেছ না? এ সেনা গড়-মান্দারণে গিয়াছে”—বলিয়া বিমলা বিমর্ষ হইয়া রহিলেন।

 অচিরাৎ শৈলেশ্বরের মন্দিরের ধবল-শ্রী নিকটে দেখিতে পাইলেন।