পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দিগ্‌গজের সাহস
৭৭

বারেই বা কেন নিরাশ হন? আজ বিধি বৈরী, কা’ল বিধি সদয় হইতে পারেন।”

 আশা মধুর-ভাষিণী। অতি দুর্দ্দিনে মনুষ্য-শ্রবণে মৃদু মৃদু কহিয়া থাকে, “মেঘ-ঝড় চিরস্থায়ী নহে, কেন দুঃখিত হও? আমার কথা শুন।” বিমলার মুখে আশা কথা কহিল, “কেন দুঃখিত হও? আমার কথা শুন।”

 জগৎসিংহ আশার কথা শুনিলেন, ঈশ্বরের ইচ্ছা কে বলিতে পারে? বিধাতার লিপি কে অগ্রে পাঠ করিতে পারে? এ সংসারে অঘটনীয় কি আছে? এ সংসারে কোন্ অঘটনীয় ঘটনা না ঘটিয়াছে?

 রাজপুত্র আশার কথা শুনিলেন। কহিলেন, “যাহাই হউক, অদ্য আমার মন অত্যন্ত অস্থির হইয়াছে; কর্ত্তব্যাকর্ত্তব্য কিছুই বুঝিতে পারিতেছি না। যাহা অদৃষ্টে থাকে, পশ্চাৎ ঘটিবে; বিধাতার লিপি কে খণ্ডাইবে? এখন কেবল আমার মন ব্যক্ত করিয়া কহিতে পারি। এই শৈলেশ্বর-সাক্ষাৎ সত্য করিতেছি যে, তিলোত্তমা ব্যতীত অন্য কাহাকেও ভালবাসি না। তোমার কাছে আমার এই ভিক্ষা যে, তুমি আমার সকল কথা তোমার সখীর সাক্ষাতে কহিও; আর কহিও যে, আমি কেবল একবার মাত্র তাঁহার দর্শনের ভিখারী, দ্বিতীয়বার আর এ ভিক্ষা করিব না, স্বীকার করিতেছি।”

 বিমলার মুখ হর্ষোৎফুল্ল হইল। তিনি কহিলেন, “আমার সখীর প্রত্যুত্তর মহাশয় কি প্রকারে পাইবেন?”

 যুবরাজ কহিলেন, “তোমাকে বারংবার ক্লেশ দিতে পারি না; কিন্তু যদি তুমি পুনর্ব্বার এই মন্দিরে আমার সহিত সাক্ষাৎ কর, তবে তোমার নিকট বিক্রীত থাকিব। জগৎসিংহ হইতে কখন না কখন প্রত্যুপকার হইতে পারিবে।”