পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮০
দুর্গেশনন্দিনী

 রাজকুমার বুঝিলেন যে, এই কথায় বিমলার মনােমধ্যে পরিতাপ উদয় হইয়াছে; অতএব তৎসম্বন্ধে আর কিছু বলিলেন না। বিমলা স্বতঃ কহিলেন, “যুবরাজ, আপনার নিকট পরিচয় দিব; কিন্তু এক্ষণে নয়। ও কি শব্দ? পশ্চাৎ কেই আসিতেছে?”

 এই সময়ে পশ্চাৎ পশ্চাৎ মনুষ্যের পদধ্বনি স্পষ্ট শ্রুত হইল। এমন বােধ হইল, যেন দুই জন মনুষ্য কাণে কাণে কথা কহিতেছে। তখন মন্দির হইতে প্রায় অর্ধক্রোশ অতিক্রম হইয়াছিল। রাজপুত্ত্র কহিলেন,—“আমার অত্যন্ত সন্দেহ হইতেছে, আমি দেখিয়া আসি।”

 এই বলিয়া রাজপুত্ত্র কিছু পথ প্রত্যাবর্তন করিয়া দেখিলেন, এবং পথের পার্শ্বেও অনুসন্ধান করিলেন; কোথাও মনুষ্য দেখিতে পাইলেন না। প্রত্যাগমন করিয়া বিমলাকে কহিলেন, “আমার সন্দেহ হইতেছে, কেহ আমাদের পশ্চাদ্বত্তী হইয়াছে। সাবধানে কথা কহা ভাল।”

 এখন উভয়ে অতি মৃদুস্বরে কথা কহিতে কহিতে চলিলেন। ক্রমে গড়-মান্দারণ গ্রামে প্রবেশ করিয়া দুর্গ-সম্মুখে উপস্থিত হইলেন। রাজপুত্ত্র জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি এক্ষণে দুর্গমধ্যে প্রবেশ করিবে কি প্রকারে? এত রাত্রে অবশ্য ফটক বন্ধ হইয়া থাকিবে।”

 বিমলা কহিলেন, “চিন্তা করিবেন না, আমি তাহার উপায় স্থির করিয়াই বাটী হইতে যাত্রা করিয়াছিলাম।”

 রাজপুত্র হাস্য করিয়া কহিলেন, “লুকান পথ আছে?”

 বিমলাও হাস্য করিয়া উত্তর করিলেন, “যেখানে চোর, সেই খানেই সিঁধ।”

 ক্ষণকাল পরে পুনর্ব্বার রাজপুত্র কহিলেন, “বিমলা, এক্ষণে আর আমার যাইবার প্রয়ােজন নাই। আমি দুর্গপার্শ্বস্থ এই আম্রকানন-