তাহার ললাটের শ্বেদ মুছাইয়া দিল, এবং হাতপাখার অভাবে সেই অঞ্চলটাই জড় করিয়া ধীরে ধীরে বাতাস করিতে লাগিল।
জীবানন্দ কোন কথা কহিল না, কেবল তাহার ডান হাতটা ধীরে ধীরে তুলিয়া ষোড়শীর ক্রোড়ের উপর রাখিয়া নিঃশব্দে পড়িয়া রহিল।
মিনিট দশ-পনর এমনি নীরবে কাটিবার পর জীবানন্দই প্রথমে কথা কহিল। ডাকিল, অলকা!
ষোড়শী কহিল, আপনি আমাকে ষোড়শী বলিয়া ডাকবেন।
আর কি অলকা হতে পারো না?
না।
কোনদিন কোন কারণেই কি―
আপনি অন্য কথা বলুন।
কিন্তু অন্য কথা জীবানন্দের মুখ দিয়া আর বাহির ইইল না, শুধু নিবারিত দীর্ঘনিশ্বাসের শেষ বাতাসটুকু তাহার বক্ষের সম্মুখটাকে ঈষৎ বিস্ফারিত করিয়া দিয়া শূন্যে মিলাইল।
মিনিট দুই-তিন পরে ষোড়শী মৃদুকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিল, আপনার কষ্টটা কিছুই কমেনি?
জীবানন্দ ঘাড় নাড়িয়া বলিল, বোধ হয় একটু কমেচে। আচ্ছা, যদি বাঁচি তোমার কি কোন উপকার করতে পারিনে?
ষোড়শী বলিল, না, আমি সন্ন্যাসিনী―আমার নিজের কোন উপকার করাই কারও সম্ভব নয়।
জীবানন্দ কিছুক্ষণ স্থির থাকিয়া হঠাৎ বলিয়া উঠিল, আচ্ছা, এমন কিছুই কি নেই যাতে সন্ন্যাসিনীও খুশী হয়?
ষোড়শী কহিল, তা হয়ত আছে, কিন্তু সেজন্য কেন আপনি ব্যস্ত হচ্ছেন?
জীবানন্দ এইবার একটুখানি ক্ষীণ হাসি হাসিয়া কহিল, আমার ঢের দোষ আছে কিন্তু পরের উপকার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, এ দোষ আজও কেউ আমাকে দেয়নি। ছাড় এখন বলচি বলেই যে ভালো হলেও বলবো, তার কোন নিশ্চয়তা নেই―এমনই বটে! এমনই বটে! সারাজীবনে এ ছাড়া আর আমার কিছুই বোধ হয় নেই।
ষোড়শী নীরবে আর একবার তাহার কপালের ঘাম মুছাইয়া দিল। জীবানন্দ হঠাৎ সেই হাতটা ধরিয়া ফেলিয়া কহিল, সন্ন্যাসিনীর কি সুখদুঃখ নেই? সে খুশ হয়, পৃথিবীতে এমন কি কিছুই নেই?
ষোড়শী বলিল, কিন্তু সে ত আপনার হাতের মধ্যে নয়!
জীবানন্দ বলিল, যা মানুষের হাতের মধ্যে? তেমন কিছু?
ষোড়শী বলিল, তাও আছে, কিন্তু ভালো হয়ে যদি কখনো জিজ্ঞাসা করেন, তখন জানাবো।
তাহার হাতটাকে জীবানন্দ সহসা বুকের কাছে টালিয়া আনিয়া বার বার মাথা
৩০