প্রফুল্ল ঘাড় নাড়িয়া কহিল, সে ঠিক। গেলে আপনার সুবিধে হতো। কিন্তু সে যখন হয়নি তখন এগুলো দেখবার কি সময় হবে?
জীবানন্দ কিছুমাত্র আগ্রহ প্রকাশ না করিয়া কহিলেন, না, এখনও হয় না, অনা সময়েও হবে না। কিন্তু অনেকটা বাইরে থেকেই উপলব্ধি হচ্ছে। এই যে হীরালাল-মোহনলালের দোকানের ছাপ। পত্রখানি তাঁর উকিলের, না একেবারে অদালতের হে? ও খামখানা তো দেখছি সলোমন সায়েবের। বাবা, বিলিতী সুরার গন্ধ কাগজ ফুঁড়ে বার হচ্ছে। কি বলেন সাহেব, ডিক্রি জারি করবেন, না এই রাজবপুখানি নিয়ে টানাহেঁচড়া করবেন―জানাচ্ছেন? আঃ―সেকালের ব্রাহ্মণ্যতেজ যদি কিছু বাকী থাকতো ত এই বউদি-বেটাকে একেবারে ভস্ম করে দিতাম। মদের দেনা আর শুধতে হতো না।
প্রফুল্ল ব্যাকুল হইয়া বলিয়া উঠিল, কি বলচেন দাদা? থাক থাক, আর একসময়ে আলোচনা করা যাবে। এই বলিয়া সে ফিরিতে উদ্যত হইতেই জীবানন্দ সহাস্যে কহিলেন, আরে লজ্জা কি ভায়া, এঁরা সব আপনার লোক, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, এমন কি, মণি-মাণিকোর এ-পিঠ ও-পিঠ বললেও অত্যুক্তি হয় না। তা ছাড়া তোমার দাদাটি যে কস্তুরী-মৃগ; সুগন্ধ আর কতকাল চেপে রাখবে ভাই। টাকা! টাকা! এর নালিশ তার তার নালিশ, অমুকের ডিক্রি আর তমুকের খিস্তিখেলাপ―ওহে, ও তারাদাস, সে-দিনটা নেহাত ফসকে গিয়েছিল, কিন্তু হতাশ হয়ো না ঠাকুর, যা করে তুলেচি, তাতে মনস্কামনা তোমার পূর্ণ হতে খুব বেশী বিলম্ব হবে বলে আশঙ্কা হয় না। প্রফুল্ল, রাগ করো না ভায়া, আপনার বলতে আর কাউকে বড় বাকী রাখিনী, কিন্তু এই চল্লিশটা বছরের অভ্যাস ছাড়তে পারবো বলেও ভরসা নেই, তার চেয়ে বরঞ্চ, নোট-টোট জাল করতে পারে এমন যদি কাউকে যোগাড় করে আনতে পারতে হে―
প্রফুল্ল অত্যন্ত বিরক্ত হইয়াও হাসিয়া ফেলিল, কহিল, দেখুন, সবাই আপনার কথা বুঝবেন না, সত্য ভেবে যদি কেউ―
জীবানন্দ গম্ভীর হইয়া কহিলেন, যদি কেউ সন্ধান করে আনেন? তা হলে ত বেঁচে যাই প্রফুল্ল। রায়মশায়, আপনি ত শুনি অতি বিচক্ষণ ব্যক্তি, আপনার জানাশুনা কি এমন কেউ―
রায়মহাশয় ম্লানমুখে অকস্মাৎ উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিলেন, বেলা হয়ে গেল, যদি অনুমতি করেন ত এখন আমরা আসি।
জীবানন্দ ঈষৎ অপ্রতিভ হইয়া কহিলেন, বসুন, বসুন, নইলে প্রফুল্লর জাঁক বেড়ে যাবে। তা ছাড়া, ভৈরবীর কথাটাও শেষ হয়ে যাক। কিন্তু আমি যাও বললেই কি সে যাবে?
রায়মহাশয় না বসিয়াই সংক্ষেপে উত্তর দিলেন, সে ভার আমাদের।
কিন্তু আর কাউকে ত বহাল করা চাই! ও ত খালি থাকতে পারে না।
এবার অনেকেই জবাব দিল, সে ভারও আমাদের!
৮৩